জীবন থেকে নেয়া কাহিনী অবলম্বনে রচিত নৈতিক উপাখ্যান 'অবতার'।

আপডেট: ২১ Jul ২০২২, ১৪:৫৮

অবতার

 

খুব গরম পড়েছে। ব্যস্ত শহর তার উপর এই কাঠফাটা রোদ, কয়েকটা জায়গা ঘুরতে বেলাটা প্রায় গড়িয়ে গেল। ক্লান্ত হয়ে পার্কে ঢুকলাম গাছের তলে বসে একটু বিশ্রাম নেব বলে। বাদাম ওয়ালার কাছ থেকে এক ঠোঙ্গা বাদাম কিনে লেকের ধারে একটা বেঞ্চে বসলাম।
নির্জন চারদিক। এ সময়টাতে পার্কে ঘুরতে আসে না কেউ।
ভাবছি- আজকের দিনটা একটা পণ্ডশ্রম। তেমন কোন কোন ফললাভ হল না। ভাগ্যটা নিতান্তই অপ্রসন্ন।
বাদামের ঠোঙ্গাটা আধা খুলে পাশেই বেঞ্চের উপর রেখে লেকের দিকে তাকিয়ে দেখছি আর দু একটা করে বাদাম নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে চিবচ্ছি আর ভাবছি -এই গরমে আর ভাল লাগছে না, বাসাই ফিরে যাব।
এমন সময় কয়েকটা শালিক এসে বসলো আমার কাছাকাছি।
ইতস্তত ভাবে ছড়িয়ে থাকা বাদামের খোসা গুলো ঠুকরে ঠুকরে খেতে খেতে আমার দিকে সভয়ে নজর রাখতে লাগলো।
ওদেরকে অভয় দেয়ার জন্য আমি অন্য দিকে তাকানোর ভান করতে লাগলাম।
অভয় পেয়ে একটা শালিক একটু উড়ে এসে বেঞ্চের অন্য পাশে হাতলে বসলো।
বেশ ভাল লাগতে লাগলো। আমি লেকের দিকে তাকিয়েই আড় চোখে শালিকটাকে দেখে নিয়ে বাদামের খোসা গুলো আগের মত মাটিতে না ছুড়ে ফেলে আধা খোলা ঠোঙ্গার ধারে শালিকটার কাছাকাছি ফেলতে লাগলাম।
পরিষ্কার বুঝলাম শালিকটা সাহস দেখিয়ে একদম কাছাকাছি এসে সেগুলো ঠুকরাতে শুরু করল।
অভাবনীয় একটা অনুভূতিতে শরীর মন ছুয়ে যেতে লাগলো।
এ পর্যায়ে নিজেকে কিছুটা অবতার মনে হতে লাগলো। ভাবতে লাগলাম –আমি বিধাতার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি আর তাঁর সাহায্য খুবই সন্নিকটে, আমার সমস্যা গুলোর সমাধান আমি তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব।
এমনি সময় শালিকটা আচমকাই আমার আধা খাওয়া বাদামের প্যাকেটটা ঠোঁটে করে নিয়ে উড়ে গাছের ডালে গিয়ে বসলো।
অসহায়ের মত শালিকটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।