জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে ব্যঙ্গাত্মক ছন্দ কবিতা 'কৃতজ্ঞতা বোধ'।

আপডেট: ১৮ Jul ২০২৩, ১৩:২৩

কৃতজ্ঞতা বোধ

 

এ ধরায়, জীবে দয়া করা মানুষের দায়, জন্মের ঋণ শোধ
স্রষ্টার সৃষ্টিতে, বোঝা যায় সাধারন দৃষ্টিতে
একমাত্র মানুষ, আছে যার হুস, ভাল মন্দ বোধ।

এ বিশ্ব চরাচর, আছে বাচার অধিকার, জীব জন্তু সবার।
মানুষ এ ধরায় বিধাতার অবতার
তাই সে দায়িত্ব ভার, মানুষ জাতির উপর।

ভেবে সে কথা, এনেছেন বাবু বেছে বেছে যথা
অনন্যা কুকুরছানা, দেখে দেখে সুদূর বিলেত থেকে।

তুষার শুভ্র লোমশ দেহ, চোখ ফেরাতে পারবে না কেহ
গভীর নীল চোখ জোড়া, প্রকৃতই প্রাণ কাড়া
আহা বেচারা, এ সুদূর প্রবাসে স্বগোত্রীয় ছাড়া!

সব তাল বেতাল, হাওয়া বাতাস জল এলাকার
করছে না ছ্যুট, এই দলছুট বিলেতি কুকুর ছানার।
সে যাই হোক, বাবু রেখেছেন লোক পাচ জন
রাত দিন ধরে রাখতে নজরে সারাক্ষণ।

করে প্রভুকে খাতির, কুকুর জাতির কি কৃতজ্ঞতা বোধ!
দেবে প্রাণ রাখতে মনিবের মান, করবে ঋণ শোধ।
ডাকলে দৌড়ে আসে, পায়ের নিচে বসে
বাবুর ভক্ত বেজায়, গাল মুখ চেটে দেয় ভালবেসে।

দিতে দীক্ষা, কৃতজ্ঞতা বোধের শিক্ষা প্রজা সাধারণে
প্রাসাদ প্রঙ্গনে, বাবু গেড়েছে শত তাবু, বিরাট আয়োজনে।
সাথে আছে ভুরিভোজ, যা জোটে না প্রজা ভাগ্যে রোজরোজ।

সেই সাথে জমিদার, ডেকেছেন পারিষদ সবার।
বাবু বলেন হেকে- জেনে রাখ সবে আজ থেকে,
রাজা বা প্রজা, এটা না সুখ না সাজা, সব বিধাতার কাজ
তবে সবে জেন করবে না কখনো, খর্ব হয়ে ছুঁতে দ্বিজরাজ।

তিনি অন্নদাতা, তাঁর প্রতি সব কৃতজ্ঞতা, আর তা দেখাতে
এনেছি দেখনা, এই কুকুর ছানা সুদূর বিলেত থেকে।

দেখ কি কৃতজ্ঞতা বোধ! এ নির্বোধ কুকুর ছানার
চাটিছে কেমন দিয়ে মন, চরন আমার।

পারিষদ সব কৃতজ্ঞ গদ্গদ, সেবা করে মোরে অকাতরে
আর প্রজারা শ্রদ্ধা ভরে, দাড়াই তারা নত শীরে।
তোমাদের কাছে, বিদেশী কুকুরেরও শেখার আছে।

কুকুরের খাবার কুকুরে খাবে, সে কথা জানে সবে
সে খাবার খেলে, তোমাদের দলে দলে পেট খারাপ হবে।
না খেলে ভুরিভোজ রোজ রোজ, পারেনা সহিতে সব জাঁত পাত
রাজার ভোজ অনন্য, তা প্রজাদের জন্য ককুরের পেটে ঘি ভাত।

তাই বলি, পড় শাস্ত্র সবে মিলি
আঁকড়িয়ে ধরে বুকে খুব জোরে, কাঁদো সুর করে প্রাণ ভরে।

কি দারুণ দৃশ্য! সৃষ্টির কি রহস্য!
মুদিত নেত্র সমুখে শাস্ত্র মেলে, কাঁদিছে প্রজারা দলে দলে
ভরিছে ভুবন কান্নার রোলে, যেন নামিছে স্বর্গ ধুলোর ভূতলে!
ঝরিছে সবার নয়ননীর নিরন্তর, চক্ষু যুগল আছে বুজে
উঁচুতে রাজাসন, নিম্নে পারিষদ গণ ব্যস্ত ভুরিভোজে।

জপতহি শেষে, প্রজারা মিলে চক্ষু খোলে স্বর্গীয় আবেশে।
রাজা আর পারিষদ সবে, চলে গেছে কবে ভুরিভোজ শেষে!
ভোলেনি জীবে দয়া তাও, বিলেতি কুকুর ছানাও নিয়েছে সাথে
প্রজা সকলে আছে বসে ভুতলে, শাস্ত্র নিয়ে হাতে।