বাবার স্মরণে নেখা ছন্দ কবিতা 'কাঁদিস নারে খোকা'।

আপডেট: ১৭ অগাস্ট ২০২২, ১৩:১১

কাঁদিস নারে খোকা

বাবা ছাড়া খোকা বড়ই একা
জীবনটা তার একেবারেই ফাঁকা।
মনটা যখন ব্যথায় ভরে, চোখ দুটো সে বন্দ করে
বসে বাবার কবর ঘেঁসে, চোখ দিয়ে তার আশ্রু ঝরে।

আশে পাশে দূরে কাছে, সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে
বইছে বাতাস মৃদু বেগে, কেবল বাবা ছেলে আছে জেগে।

এমনি ভাবে পায়নি তাঁকে কোন ছলে জীবন কালে
এই ফাঁকে কি বলব তাকে ‘বাবা তুমি কেমন আছো!
দেখিনি তোমায় কত সময়, যখন থেকে চোখ বুজেছো’।

বাবা তোমায় ‘আপনি’ ডেকে, ছিলাম দূরে জীবন ভরে
এখন তোমায় জড়িয়ে ধরে ‘তুমি’ বলতে খুব ইচ্ছে করে।

এমনি ক্ষনে এই নির্জনে, খুব ইচ্ছে করে মনে মনে
তোমার বুকে মাথা গুজে, চোখ দু’খানি একটু বুজে
জুড়াই শুধু মনের জ্বালা, করব নাক আর ঝামেলা।

চোখের জল বাধ ভেঙেছে, চোয়াল দুটো ভিজে গেছে।

ডাকল পাখী গাছের ডালে, শুরে শুরে তালে তালে।
গাছের শাখে হুস হুস করে, হাসল বাতাস মৃদু স্বরে
গাছের পাতা পড়লো ঝরে
শুখিয়ে দিল, ঘাম যা ছিল, মোর কপালে।

বৃষ্টি এল আকাশ থেকে, চেনা পাখি উঠলো ডেকে
বলল বাবা চুপে চুপেঃ
কবর ধরে খোকা, কাঁদিস নারে বোকা
কবর সবার কায়ার আধার, আমি নেই ওখানে আর।
শরীর ছিল আমার সাথে সুখে দুখে
যার যেটা সে নিল বুকে।
মৃত শরীর মাটির খাবার,
এতদিনে একটুও আর নেই বাকি তার।

আছি আমি বাতাস হয়ে, চলছি বয়ে সকাল সাঁঝে
পাখীর কন্ঠে সুরের মাঝে।

যখন সূর্য কিরণ ঠিকরে পড়ে তোর উপরে
বাতাস যখন বয়ে যাবে, চোখ মুখে তোর বুলিয়ে দেবে
ভাববি আমি আছি তাতে, সব সময় তোরই সাথে।

‘খোকা, যা ফিরে তুই নিজ ঘরে, শুধু শুধু ভিজিস নারে
কষ্ট যত তা সব শরীরে, তা আত্মাকে না ছুঁতে পারে।
শরীর ছেড়ে আমরা এখন আলো
এখানে সবাই আছি ভাল।

শরীর সেত কেবল কায়া, শুধু জাগায় মায়া,
উড়লে পাখী হায়! সেটা খাঁচা ছাড়া আর কিছু নয়!

স্থায়ী কেবল আলো,
আছি আমি তোরই পাশে আলো কিম্বা কালো।
সোনা, কালো দেখে ভয় পাবি না,
কালো মানে আলো আছে ধারে কাছে, খুব দূরে না।

কাঁদিস নারে খোকা, তুই বুঝিস না কেন, বোকা!
চোখ যে শুধু দেখতে পারে, যা কিছু থাকে আকারে
আমিতো আকার ছেড়ে, আছি নিরাকারের নীড়ে।
যখন যেদিন কোন ক্ষনে, আমাকে তোর পড়বে মনে