জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে ছন্দ কবিতা 'মা ও খোকা'।

আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২৬

মা ও খোকা

 

খোকা দিনে দিনে বেড়ে, মায়ের আঁচল ছেড়ে
ধরাকে সরা জ্ঞান করে, মনের আঁচল ধরে।
খোকার এখন, ভ্রমে ভরা মন
ভরতে পারে না তা, কোন মানিক রতন।
অবুঝ মন, থাকে অতৃপ্ত সারাক্ষন, দৃষ্টি শুধু বাহিরে।

খোকার সব ঘর, সুর আর গন্ধে ভরা তার
পুরো কৃত্রিমতার আঁধার।

খোকার সে সুরের ভুবনে হায়,
পাখীর ডাক, মেঘের হাক, বৃষ্টি বাতাসের শব্দ নাই।
সুর সেখানে দানবের গর্জন, আর বোমার বিস্ফোরণ,
যন্ত্রের হুঙ্কার সারাক্ষণ, যেন তাদের আত্ম ক্রন্ধন।

খোকার সে ঘর, কাঁচের দেয়ালে ঘেরা,
ভুরভুর গন্ধ সারা, রঙ্গিন বোতলে ভরা।
খোলা বাতাসের সাথে তাদের জনমের শত্রুতা
বাতাসে যত ভয়, কখন না উড়ে শেষ হয় তা।

আমের মুকুল, বৃষ্টি ভেজা ফুল বা মাটির গন্ধ নয়
খোলা বাতাসে যা চারপাশে ছড়ায়।
কৃত্রিম সুর আর গন্ধ মায়ের শরীরে না সয়,
তাতে তার বুক করে ধুক ধুক, মাথা ব্যথা হয়।

সে কথা বোঝে খোকা, নয় সে অত বোকা
তাইতো তখন থেকে, খোকা রাখে মাকে
ছাদের চন্দ্রশালায়, বিনা বাড়তি কোন খরচায়।

শেষে হায়! মায়ের হয় ঠাই
খোকার প্রশস্থ ছাদের ছোট্ট চিলে-কোঠায়!


খোকার প্রকান্ড বাড়ীর ছাদ, সব ফাঁকা মায়ের ঘরটুকু বাদ
ছোট্ট মায়ের আবাস, উপরে উদার আকাশ, শুধু প্রকৃতির স্বাদ।

খোকার নজর থাকে, বাহিরের দিকে
মোহ জালে, দিশেহারা হলে, কেউ দেখে না নিজেকে।

খোকারা সবে, থাকে ব্যস্ত নিতে সমস্ত এ ভবে
নিজের দিকে তাকাতে মানা, ভাবে সেসব তার জানা।
দেখে না খোকা, জন্মের চিহ্ন আছে তার নাভিতে আঁকা।
ছিড়ে মায়ের নাড়ী, পরেছে মনের হাতকড়ি, যা কেবলি ধোঁকা।

শরীরে আত্মার বাস মায়ের বেশে, একদিন কিছু না বলে শেষে
টুপ করে হায়, সে যে চলে যায়, আপন নিবাসে।

মায়ের গল্প শেষ! সব যেন চোখের নিমেষ।
নিস্তেজ দেহ থাকে পড়ে, একটুও না নড়ে।
খোকা চকিতে থেমে দাঁড়ায়, কিন্তু হায়! বাস্তবের ধাক্কায়
মাকে ছেড়ে খোকা ছোটে একা একা, মরিচিকার মায়ায়।

এটাই কি জীবন! মনের রাজত্ব পুরোদম!
দুর্বার মায়া জাল, চাপা থাকে চিরকাল আত্মার ক্রন্ধন!