অনাথ

আপডেট: ০৮ Jun ২০২২, ১৯:০৩

অনাথ

 

 

সন্ধ্যার আঁধার ততোক্ষণে জেঁকে বসেছে, চলতি ট্রেনে উঠে বসলো অবনী, তারপর কত শহর বন্দর মাঠ প্রান্তর পেরিয়ে ছুটে চললো ট্রেনটা। পথে আলো আঁধারিতে কত মানুষ উঠলো আবার নামলো। ভোরের আলো ফোঁটার পর থেকে দুধারের মাঠ ঘাট প্রান্তর চোখে পড়তে লাগলো।
ছোট বড় অনেক স্টেশান পার হল ট্রেনটা। ছোট স্টেশান গুলো পার হওয়ার সময় কেবল লম্বা লম্বা ভেপু বাজিয়ে জানান দিতে দিতে পার হল। আর বড় স্টেশান গুলোতে বুনো শুয়রের মত ঘ্যাত ঘ্যাত করতে করতে ট্রেনটা থামল কিছু সময়ের জন্য।
অবনী বুঝল এটা মেইল ট্রেন। মেইল হোক বা লোকাল তাতে কিছুই যায় আসে না অবনীর, কারণ নির্দিষ্ট কোন গন্তব্যে যাওয়া নয় কেবল যা কিছু নিজের তার সব ছেড়ে দূরে কোথাও যাওয়াতেই ওর স্বস্তি।
সপ্তাহ জুড়েই কাল মেঘে আকাশটা ঢাকা আর অঝরে বৃষ্টিও ঝরছে। রাত দিনের তফাৎটা কেবল বোঝা যায়, কিন্তু রাত বা দিনের সময়টা চোখে দেখে বোঝা অসম্ভব।

ছোট্ট একটা রেল স্টেশান। বর্তমানে ব্রাঞ্চ লাইনটা মেরামতের আওতাধীন থাকাই মুল লাইনের উপর দিয়েই লোকাল মেইল সব ধরনের ট্রেনের যাতায়াত। এখানে থামার কথা না এ ট্রেনটার তবুও কেন জানি থেমে গেল।
জানালা দিয়ে মুখ বের করে দেখল অবনী। বাইরে সমান ভাবে বৃষ্টি ঝরছে, স্টেশানটা একেবারে জনমানব শুন্য। এই ট্রেনের জন্য এটা কোন নির্ধারিত থামার স্টেশান নয়, বোধহয় সামনে কোন ক্রসিং বা অন্য কোন অজানা কারণে থামতে হয়েছে। ট্রেনের চালকও সঠিক জানে না কতক্ষণ থামতে হবে এখানে। কোন কিছুরই নিশ্চয়তা নেই।

অনিশ্চয়তার একটা অনন্য রুপ আছে। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে, মনে করে পাশের কাউকে জিজ্ঞেস করলে উত্তরটা জানা যাবে। কিন্তু প্রকৃতই এ মুহূর্তে ট্রেনটা কখন আবার ছাড়বে সে উত্তরটা এই ট্রেনের কারো জানা নেই। চালক যাত্রী সবাই এ ব্যাপারে এখন একই কাতারে দাঁড়িয়ে। উত্তরটা যার জানা তিনি ওপরওয়ালা, যার অবস্থান এখান থেকে অনেক দূরে। ওয়ারলেছের মাধ্যমে চালকের কাছে ক্লিয়ারেন্স আসলে তবে ট্রেনটা আবার চলবে।
সহ যাত্রী যে কয়েকজন আছে তারা কমবেশি সবাই ঘুমোচ্ছে। সবাই নির্দিষ্ট গন্তব্যের যাত্রী তাই এখানে নামার কোন তাড়া নেই। অবনীই বোধহয় একমাত্র ব্যতিক্রম। গন্তব্যহীন তার যাত্রা তাই কোন স্টেশান আসলো গেল তার কোন খেয়াল নেই।
দেরী দেখে অগত্যা অবনী নেমে দাঁড়ালো প্লাটফর্মের উপর।
সাঁ সাঁ বৃষ্টির একটানা শব্দের মধ্যে খুব কর্কশ ভাবে ইঞ্জিনটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোঁ গোঁ শব্দ করে পরিবেশটাকে অসহনীয় করে তুলেছে।
ছাতাটা খুলে দাড়াতেই ট্রেনটা আবার গদ গদ শব্দে চলতে শুরু করলো। নির্বাক হয়ে অবনী
সেদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। মনে হল ট্রেনটা যেন ওকে এখানে নামিয়ে দেয়ার জন্য
অপেক্ষা করছিল।
ট্রেনটা পূর্ণ গতিতে উঠার আগে ইচ্ছে করলে অবনী ট্রেনে উঠতে পারতো। কিন্তু ভেতর থেকে
তেমন কোন সাঁই না পাওয়াই ও তেমনি ভাবে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে রইলো।
ট্রেনটা চলে যাওয়ার পর স্টেশানটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল। কাউকে কোথাও দেখা গেল না।
বৃষ্টিতে এমনিতেই সব কিছু ঝাপসা তার উপর কোন প্রাণীর আনাগোনা না থাকাতে যেন একটা গা ছম ছম করা পরিবেশের সৃষ্টি হল।
দু কামরা ওয়ালা লাল দেয়ালের স্টেশান বিল্ডিং বাদে আশে পাশে অন্য কিছুই নজরে পড়লো না। স্টেশানের বিপরিত দিকে বেশ কিছুটা দূরে আবছা গাছ গাছালি ভর্তি উঁচু নিচু টিলা ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টি সীমার মধ্যে পড়লো না। কোন বসতি থাকলে হয়তো ওগুলোর ভিতরেই থাকবে।
বেলা কত হল সেটা আঁচ করা প্রায় অসম্ভব। অন্ধকার না নামলে রাত হয়েছে বলে বোঝার কন উপাই নেই। বেলা ডুবতে আর কতটুকু সময় বাকি সেটা আন্দাজ করা পন্ডশ্রম ছাড়া বোধহয় আর কিছু হবে না।
প্লাটফর্মের পাশেই যাত্রীদের বসার জন্য উপরে টিনের দোচালা ছাউনির নিচে সিমেন্টের একটা বেঞ্চ। সেখানেই বসে ছাতাটা বন্দ করে পাশে রাখল অবনী। চারিদিকে নির্জনতা, প্রকৃতিই কেবল সরব আর কর্মচঞ্চল।
নির্জনতার একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। নির্জনে চুপচাপ বসে বা দাঁড়িয়ে সব কিছু অবলোকন করা অবনীর চিরকালের পছন্দের একটা বিষয়। সামনে যা কিছু ঘটছে তার অংশ না হয়ে শুধু অবলোকন করার মধ্যে একটা আকর্ষণ বোধ করে অবনী।

অবনী তখন অনেক ছোট, সাত আট বছর বয়স হবে। ইংরেজ শাসকরা সারা দেশে জমি জরীপের কাজ করাচ্ছিল। ওদের অঞ্চলটা ছিল ছোট বড় টিলা আর অনেক বড় বড় জলাভূমিতে পূর্ণ।
তাদের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় টেন্টের নিচে অস্থায়ী ক্যাম্প করে করে জরিপের কাজ করতে ব্যস্ত। সে রকমই একটা ক্যাম্প ছিল অবনীদের গ্রামের পাশে। এক ইংরেজ সাহেব সপ্তাহে দুএক দিন আসতেন কাজের তদারকিতে।
দুপুরের পর পর কাজ শেষে লোকজন সব ক্যাম্পে ফিরলে গ্রামের উৎসুক ছোট বড় ছেলেরা সেখানে এমনিতেই ভিড় জমাত। যেদিন সাহেব তদারকিতে আসতেন সেদিনটা বিশেষ ভাবে জমে উঠত। কারণ সাহেব তার তদারকি শেষ করে বেলা ডুবার ঠিক আগে আগে সব ছেলেদের জড় করে একটা মজার খেলা খেলতেন।
তিনি কাগজের টুকরোই মুড়ে কয়েকটা প্যাকেট বানাতেন। তারপর সেগুলো বিভিন্ন দিকে ছুড়ে মারতেন, আর ছেলেদের দল দোদুল্যমনতাই ভুগে এলোপাথাড়ি ভাবে দল ছুট হয়ে দৌড়ে সেগুলোর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ত। কোন কাগজের মোড়কের ভিতর ইটের টুকরো বা পাথর থাকতো আবার কোনটার ভিতর টাকার নোট বা ফল জাতীয় খাবার জিনিস থাকতো।
খেলা দেখতে দেখতে সাহেব হাসতে হাসতে তার গাড়ীতে উঠে বসতেন আর ছেলের দল হাতে পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গায়ে ধুলো মাটি মেখে জয় পরাজয়ের আনন্দ বিষাদে সেদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখত আর প্রস্থানরত সাহেবের হাত নাড়ানির জবাব দিত।
অবনী দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নীরবে তা অবলোকন করত। সাহেবের ছুড়ে দেয়া কাগজের প্যাকেটের ভিতর লুকিয়ে রাখা যৎসামান্য পুরষ্কার পাওয়ার দৌড়ে সতীর্থদের পরাজিত করার নেশায় নেশাগ্রস্থ অবুঝ ছেলেদের মনোভাবটা বুঝতে পারলেও সাহেবের সে খেলার স্বরূপটা ঠিকভাবে বুঝত না অবনী।
অবনী চিরকাল ডানপিঠে খেলা পাগল কিন্তু এ খেলাটা ওর খুব অপছন্দ হওয়াই কখনোই অংশ গ্রহন না করে দূরে দাঁড়িয়ে দেখত কিন্তু কোন রকম অনুভুতি প্রকাশ করত না।
জরিপের কাজ শেষে ক্যাম্পটা যেদিন গুটিয়ে নিয়ে যাবে সেদিন বিকেলে সাহেব ক্যাম্পের মাঠে বেশ আয়োজন করে সে অঞ্চলের সব বাচ্চাদের জন্য স্বল্প পরিসরে কিছু খেলা ধুলার ব্যবস্থা করেছিলেন।
সারা দিন বাচ্চারা সবাই দৌড় ঝাপ বিভিন্ন খেলাই স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহন করে নানা রকম পুরষ্কার জিতল কেবল অবনী বাদে।
সব শেষে সাহেব শেষ প্রতিযোগিতার কথা ঘোষণা করলেন। তিনি তার দেশ থেকে আনা সুন্দর মোড়কে জড়ানো চকলেটের একটা প্যাকেট দেখিয়ে ঘোষণা করলেন যে, এরকম চকলেট ভরা একটা বড় প্যাকেট এই মাঠের একশো গজের মধ্যে টিলা বা ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, সেটা যে বা যারা খুজে বের করবে প্যকেটটা তার।
চকলেটের প্রতি সবারই টান তাই সবাই খেলাটা খেলার জন্য উৎসুক হয়ে উঠলো। এতক্ষণে চুপচাপ বসে থাকা অবনী অংশ গ্রহনের জন্য তৎপর হয়ে উঠল। সে প্রতিযোগী সব ছেলেদের মাঠের এক কোনে জড় করে কি একটা পরামর্শ করল তারপর সবার সাথে সেও চকলেট খুজে বের করার প্রতিযোগিতাই বেরিয়ে পড়লো।
নিমেষেই সব ছেলেরাই চকলেট খুজতে টিলা আর গাছ গাছালির আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষন পর সবাই একত্রে চকলেট খেতে খেতে আনন্দে ডগমগ করতে করতে দল বেধে স্টেজের সামনে হাজির হল।
সাহেব বিষয়টি নীরবে লক্ষ করলেন এবং এসবের নেতৃত্বে থাকা অবনীকে চিহ্নিত করলেন। সাহেব ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলাই ক্ষুদ্র সমাপনি বক্তৃতা শেষে অবনীকে কিছু বলার আহবান জানালেন।
একটু অপ্রস্তুত হলেও অবনী সাহস যুগিয়ে সাহেবের পাশে যেয়ে দাড়াল।
-আমার কিছু বলার নেই, তবে একটা অনুরোধ আছে।
সাহেব ওর দিকে তাকিয়ে মৌন সম্মতি দিলেন।
-আমি সাহেবের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতে চায়।
সবাই অবাক হল। সাহেব মৌনতার সাথে সম্মতি জানিয়ে দৌড় শুরু করার জন্য অবনীকে নিয়ে মাঠের এক প্রান্তে গিয়ে দাড়ালেন।
সবাই হতবাক। চারদিক সুনসান নিরবতা।
দৌড় শুরু হল। দৌড়ে সাহেব হেরে গেলেন।
কিন্তু সাহেব ইচ্ছে করে হারলেন না প্রকৃতই হারলেন সে সম্পর্কে অবনী সহ উপস্থিত সবার মনে প্রশ্ন জাগল।
সাহেব আর সময় নষ্ট না করে অবনীকে বিজয়ী ঘোষণা করে নিজের হাতে থাকা ক্ষমতার মানদণ্ড লাঠিটা পুরষ্কার স্বরূপ অবনীর হাতে তুলে দিলেন।
এখানেই শেষ না। কয়েক মাস পর জরিপ রিপোর্ট বেরুলে সবাই দেখল প্রায় একশো একরের জলমহল সহ তদসংলগ্ন জমি অবনীর নামে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
সেভাবেই অনাথ অবনী দরিদ্র জেলে থেকে জমিদারে পরিণত হল।
তারপর অনেক বছর পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হল। অবনীর বিধবা মা বিচক্ষণতার সাথে সব কিছু পরিচালনা করে ছেলেকে সব গুছিয়ে দিয়ে ছেলের একমাত্র ছেলে সন্তানের মুখ দেখে চোখ বুঝলেন।
অবনী তার একমাত্র ছেলেকে যার পর নেই আদরে সোহাগে বড় করে করে দেশ বিদেশে নামি দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করিয়ে উপযুক্ত শিক্ষাই শিক্ষিত করে তুলার প্রয়াস পেল। কিন্তু ছেলেটা অতি প্রাচুর্যে বকাটে হয়ে অনেক বদনাম করল। শেষে উপায়ান্তর না দেখে ছেলেকে পড়াশোনা থেকে ছাড়িয়ে তার কুকীর্তি সামাল দিতে বিয়ের পূর্বেই গর্ভবতী হওয়া মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনল। ছেলেকে তার সম্পত্তির কিয়াদংশ দিয়ে বাকি সব সম্পত্তি একটা ট্রাষ্টের আওতায় এনে এ অঞ্চলের দরিদ্র সব মানুষদেরকে অংশীদার করার ঘোষণা দিল অবনী।
অবনী বুঝল যে তার একমাত্র ছেলে তার এ চিন্তার ঘোর বিরোধী। কিন্তু ছেলে এতটা নিচে নামবে সেটা ছিল অবনীর কল্পনাতীত। ছেলে তার শশুর বাড়ীর লোকজনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সব সম্পত্তির জাল দলিল করে তার নিজের নামে করে নিল। যে মুহূর্তে অবনী সেটা জানতে পারলো সে মুহূর্ত থেকে জীবনের প্রতি একটা ঘৃণার সৃষ্টি হল। তাই আর একটুও দেরী না করে কেবল মাত্র ব্যাংকের চেক বই গুলো আর কিছু কাপড় একটা ব্যাগে ভরে ছেলে পোতা সব ছেড়ে জীবন থেকে পালাতে তার এ নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু করল।

-চা খাবেন দাদু।
একটা ছোট ছেলের ডাকে সম্বিত ফিরল অবনীর।
বৃষ্টির ফোটা ছোট হয়ে আসলেও তখনও পুরপুরি থামেনি। সাত আট বছরের একটা ছেলে পলেথিনের জামা টুপি গায়ে মাথায় জড়িয়ে চায়ের কেটলি হাতে দাঁড়িয়ে। প্লাটফরমটা ও ছাড়া সব কিছু আগের মত নির্জন।
-এ ভরা বর্ষাই তুমি কোথা থেকে চা নিয়ে আসলে!
-স্টেশানের পিছনে একটা টিনের চালা দেয়া একটা চায়ের দোকান আছে। সেখান থেকে আমি ট্রেনের প্যাছেঞ্জারদের কাছে চা বিক্রি করি।
-কিন্তু বাবা, এ ট্রেনটা তো এখানে দাঁড়ানোর কথা না!
-হ্যে, তাইতো। কিন্তু আপনারও তো এখানে নামার কথা না!
ছেলেটার কথাই হতচকিত হল অবনী।
-তোমার নাম কি?
-কুড়ানী।
-এটা আবার কি রকম নাম!
-আমি অনাথ তো, আমার বাবা মানে যার সাথে আমি থাকি তিনি আমাকে শিশু অবস্থাই এই স্টেশানে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন, সেভাবেই এ নামে তিনি আমাকে ডাকেন।
অবনী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে।
-আমার বাবা মা আমাকে ইচ্ছে করে এই স্টাশানে ফেলে গিয়েছিল না আমাকে হারিয়ে ফেলেছিল তা কেউ জানে না।
হাফ প্যান্ট পরনে খালি পায়ে দাঁড়ানো ছেলেটির মায়া ভরা চোখ দুটো অবনীকে যেন বিদ্ধ করলো। মনে হল যেন কত দিনের চেনা।
ছেলেটিকে প্রায় একই বয়সী অবনীর পোতার মত মনে হলেও তার সাথে তুলনা করতে একদম ইচ্ছে হল না। তার পোতা বড় লোক ঘরের আদরের দুলাল। তাই এ ছেলের সাথে কোন মিল নেই। বরং অনাথ ছেলেটির মধ্যে অবনী যেন নিজেকে আবিষ্কার করল।
ছেলেটিকে ইশারাই ডেকে আদর করে পাশে বসালো অবনী।
-কোন না কোন পর্যায়ে সবাই অনাথ এ দুনিয়াই।
কথাটা ভেবে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখল অবনী।
-অনাথ ছেলেটি জানে না তার বাবা মা তাকে ইচ্ছে করে ফেলে গিয়েছিল না প্রকৃতই হারিয়ে ফেলেছিল। যেমন ভাবে অবনীও জানে না, সাহেব সেদিন প্রকৃতই দৌড়ে হেরে গিয়ে সেদিন ওকে জিতিয়ে দিয়েছিল কিনা!
-সব জীবনই এমনি অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা থেকেই শেষ হয়ে যায়। যার উত্তর বিধাতা ছাড়া অন্য কেউ জানে না। অযথা সে সব প্রশ্নের জবাব খুঁজে সময় নষ্ট করার জন্য বিধাতা কাউকে সৃষ্টি করেনি। সব মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নামই বোধহয় জীবন।

Written By: Col. Meher Mohabbat Hossain Retd.