Heading
আপডেট: ৩১ Jul ২০২২, ১৩:৫৮
যুদ্ধ শেষ হলো। দেশ স্বাধীন হলো। আটকে পড়া মানুষগুলোও ধীরে ধীরে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গেল।
ফিরে গেল শিউলি আর ওর বাবা।
সবাই এক এক করে দেশে ফিরলো। মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থী সবাই।
মানিকও ফিরলো। তারপর সব কিছু ঝেড়ে ফেলে নিজের পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করলো।
যুদ্ধ মানিকের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করলো। এই কয় মাস যুদ্ধে কত রকম মানুষ আর তাদের কত রকম মুখ ও দেখেছে। ওর মনে হয়েছে একটা মানুষ এক এক পরিস্থিতিতে এক এক রকম। ওর মানসপটে আঁকা হয়ে আছে লক্ষ কোটি মানুষের মুখ। তায় মানুষের মুখ দেখলে আজকাল ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কোনটা যে আসল আর কোনটা যে কৃক্রিম তা বুঝতে পারে না। প্রতিটি মানুষই যেন কলুষিত কোন না কোন ভাবে।
এত মুখের ভীড়ে শিউলির মুখটাও ওর চোখের সামনে ভেষে ওঠে। তবে এই মুখটা ওর নানীর মুখের মতই মনে হয়েছে, যার রং বদলায় না।
যুদ্ধ থেকে ফিরে একবার ভেবেছিলো পড়াশোনা করে কি হবে। কিন্তু শিউলির কখা মনে হওয়াই ডাক্তার হওয়ার বাসনাটা ওর মনে গেথে ছিল।
মানিক ডাক্তার হলো, উন্নতর ডিগ্রির জন্য বিদেশেও পড়াশোনা করলো। তারপর বেশ কয়েক বছর চাকরীও করলো। কিন্তু কিছুতেই ও মনে কোন তৃপ্তি পেল না।
অবশেষে সব ছেড়ে দিয়ে নিজ গ্রামে ওদের শূন্য ভিটায় একটা ছোটখাটো হাসপাতাল খুললো। ভাবলো বাকী জীবনটা এই গরীব নিঃস্ব রোগীদের সেবা করেই কাটিয়ে দেবে।
ওর বাবার অবশ্য তাতে সাই ছিল না। তিনি ছেলেকে অন্য ভাবে সবার মত করে প্রথিষ্ঠিত দেখতে চেয়ছিলেন। অনেক ভাবে মানিককে বেঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু কোন ফল হলো না।
বাবার সাথে মানিকের সম্পর্কটা ছিল চিরকালই আনুষ্ঠানিক। বাবাকে কাছে পায়নি তেমন ভাবে কখনো। তাকে পেয়েছে শুধু অর্থের যোগানদার হিসাবে।
বাবার অসহায়ত্ব মানিক বুঝতো। যুদ্ধ থেকে ফিরে ওর পা হারানো অবস্থা দেখে বাবার কান্না কোন ভাবেই থামছিল না। তারপর বাবাই ওকে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করলেন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে তিনি মানিককে ডাক্তারী পড়ালেন।
নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বাবা ছেলের সিদ্ধান্তে স্বতঃস্ফূর্ত সাই না দিলেও গ্রামে পড়ে থাকা জমিতে হাসপাতাল করার ব্যপারে কোন আপত্তি করেননি।
কিন্তু মনের অতৃপ্তিটা গেল না মানিকের। কোথায় যেন কিসের একটা অভাব।
আজকাল কোন কিছুরই হিসাব মিলাতে পারে না মানিক। ওর জীবনটাই যেন পুরোটাই গড়মিল।
-যুদ্ধ আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। বিশ্বের মানচিত্রের বুকে আমাদের জন্য স্থায়ী পরিচিতির ব্যবস্থা করেছে। লক্ষ্য জীবন আর সহস্র মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে এটা আমাদের অর্জন। এত সব ত্যাগের কথা আমরা গর্বভরে স্মরণ করি।
-কিন্তু যে মা সন্তান হারালো, যে স্ত্রী স্বামী হারালো, যে বোন ভাই হারালো, যে মেয়েটি সতীত্ব হারালো তাদের বোবা কান্না কখনো ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে না। কারণ তাহলে বোধহয় সে ইতিহাস লিখে শেষ করা যাবে না কখনো। এ যে ইতিহাসের অন্যপিট।
বিষয়গুলো নিয়ে অনেক ভেবেছে মানিক কিন্তু কোন কুলকিনারা করতে পারিনি।
মানিক ওর হাসপাতালে এক মধ্যবয়সী মহিলাকে আয়ার চাকরী দিয়েছে নাম সখিনা। ওর বড় ছেলেটা মুক্তি যুদ্ধে মানিকের সাথে ছিল। একই অপারেশানে মানিকের সাথে ওর ছেলেটাও আহত হয়েছিল। পরবর্তীতে হাসপাতালে ও মারা যায়। ওর কাছ থেকেই ওর বিধবা মায়ের ঠিকানাটা পেয়েছিল মানিক।
মানিককে খুব আদর করে সখিনা। সব সময় একটা অধিকারের জোর নিয়ে কথা বলে। ওর অন্য ছেলে মেয়েরা যে যার মত সংসার করে নিজেদের মতোই আছে। সখিনা একা তায় হাসপাতালেই ওর থাকার ব্যবস্থা করেছে মানিক।
সখিনা ওর ছেলের জন্য নিরবে কাঁদে। ওর ছেলের নাম মুক্তিযোধ্যাদের তালিকায় লেখা হয়েছে। সরকার নিয়ম মাফিক ওকে সাহায্য সহোযাগিতা করছে। মৃত মুক্তিযোদ্ধার মা হিসাবে ওকে বিভিন্ন ভাবে মুল্যায়নও করা হচ্ছে। তবুও ওর কান্নাটা কেউ থামাতে পারছে না।
মানিক যুদ্ধে একটা পা হারিয়েছে। কৃত্রিম পা দিয়ে অবশ্য ভালো ভাবেই সব কাজ চলে যায়। মানিককে দেখে সখিনা চোখ মুছতে মুছতে নীরবে আফসোস করে- ছেলেটা যদি পঙ্গু হয়েও বেচে থাকতো!
হাসপাতালের খাবারই খায় সখিনা। নিজের জন্য ওর তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। বরং ছেলে মেয়েরা এসে মাঝে মাঝে ওর কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে যায়।
সখিনা একদিন মানিককে বললো ও ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলবে। প্রতি মাসে কিছু কিছু করে যে টাকা জমাচ্ছে ওগুলো নিজের রূমে রাখলে কখন চুরী হয়ে যায় তায় টাকাগুলো ব্যাংকে রাখা দরকার। ওর ইচ্ছা মরার আগে একবার হজ করবে।
মানিক ওকে সাথে করে একদিন ব্যাংকে নিয়ে যাবে বলে জানালো। আজ যায় কাল যায় করে সময় অভাবে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
এরই মধ্যে ওর ছোট ছেলেটা টাকার জন্য আসলো। গার্মেন্টসে চাকরী করে ছেলেটা, বিদেশে যাবে কিছু টাকার দরকার।
সখিনা কিছুতেই টাকাগুলো ছেলেকে দেবে না। প্রথমে কথা কাটাকাটি তার পর ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে টাকার পোটলাটা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য হাতের পাশে পাওয়া একটা রড দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করলো ছেলেটা।
সখিনার চিৎকারে সবাই জড় হয়ে ওকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে আসলো। ছেলেটা টাকার পোটলা নিয়ে পালালো।
সখিনাকে বাচানো গেল না। ও মৃত্যুর আগে মানিকের হাত দুটো ধরে কাকুতি মিনতি করলো ওর ছেলের যেন কিছু না হয়। একটা ছেলেতো গেছেই এটাকে কোন রকমে হারাতে চায় না ও।
কি পেল সখিনা জীবনের কাছ থেকে! অকালে স্বামী হারালো, সে যন্ত্রনা বুকে কাটার মত বিধে সারাটা জীবন ক্ষত করলো। যুদ্ধ ওর এক ছেলেকে কেড়ে নিলো। শেষে ওর রক্তই ওর জীবনটায় নিয়ে নিল।
এগুলো কি বিধাতার শাস্তি! কি এমন করলো মূক মূর্খ ছাপোষা সখিনা যার জন্য এত শাস্তি ওর! পরোকালে বিচারের জন্য কি রইলো তাহলে!
জীবনের এ ধরণনের ঘটনাগুলো মানিককে হতবিহ্বল করে দেয়। কোন কিছুর হিসাবই আজকাল মিলাতে পারে না মানিক।
যুদ্ধে পা হারানোর পর ওর শারিরীক তৎপরতা কিছুটা হলেও কমে গেল সত্য, কিন্তু মনের তৎপরতা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়ে নিজেকে নিয়ে আর মানুষকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে শিখলো মানিক।
মাকে হারানোর ব্যথাটা ওর আজন্ম। এত বিশাল একটা কষ্ট বুকে নিয়ে জীবনটা শুরূ ওর। এটা কি বিধাতার শাস্তি! তবে কোন অপরাধে সে শাস্তি তার জবাব মানিক খুজে পায়নি।
আর যদি এগুলো শাস্তি না হয় তবে কি! এগুলো কেন!
যুদ্ধে ওর পায়ে যখন গুলি লাগলো, কি ভীষণ সে যন্ত্রনা। ও যখন জ্ঞান হারালো কেবল তখনই যন্ত্রনার অবসান হলো। তারপর আর কিছুই বুঝলো না তখন। ও যেন সেদিন ওর আহত দেহের খাচা থেকে বের হয়ে যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়েছিল।
আমাদের ইন্দ্রিয় গুলোই সব যন্ত্রনার বাহন। এগুলোই আবার মানুষের সকল কর্মকান্ডের চালিকা শক্তি। এগুলোর বসবাস মানুষের দেহের সাথেই। তায়তো দেহের সাথে সংযোগটা বিচ্ছিন্ন হলেই সব যন্ত্রনার শেষ হয়। আর মহাত্রানকর্তা মৃত্যু দিয়ে পার্থিব সব কিছুর অবসান ঘটায়।
মানিক জীবনে এমন অনেক কিছুই পেয়েছে যা ওর অর্জন নয়। ভাগ্য ওকে ওগুলো এনে দিয়েছে। ভাগ্য কি পুরস্কার! তায় যদি হয় তবে কিসের জন্যই সে পুরস্কার! আর কেনই বা সে পুরস্কার!
এমন কোন মনুষ্য জীবন নেই যেখানে এই শাস্তি বা পুরস্কারের উদাহরণ নেই।
জীবনের অর্থ জীবনের স্বরূপ নিয়ে যে ছবিটা মানিকের মানসপটে আকা ছিল, যুদ্ধে অংশ গ্রহনের পর তা সব যেন এলোমেলো হয়ে গেল।
মনটা বেশী খারাপ হলে আগে নানীর কাছে ছুটে যেত। কিন্তু এখনতো আর তা হবার নয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর আসুস্থতায় ভুগে ভুগে নানী মারা গেলেন।
নানী মারা যাওয়ার সময় মানিক দেশের বাইরে ছিল। মানিক আসতে পারেনি কারণ ওর কাছে খবর পৌছাতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো। মরার সময় বৃদ্ধা নাকি মানিককে খুজেছিলেন। তিনি খুব বিরক্ত করেছিলেন সবাইকে মানিককে আনার জন্য।
পড়াশোনা শেষে বিদেশ থেকে ফিরে নানীর অভাববোধে ওর দমটা বন্দ হওয়ার উপক্রম হলো। মনে হলো তখনই ছুটে যায় নানী বাড়ীতে।
কিন্তু নানীর অবর্তমানে সেখানে যাওয়ার জন্য মনটা সাই দিল না। একবার ভেবেছিল গিয়ে অন্ততঃ কবরটা দেখে আসবে। কিন্তু ওর দেখা মায়ের কবরের দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেষে উঠতেই সে ভাবনাটাও বাদ দিল। তায় নানী মারা যাওয়ার পর মানিক আর যায়নি ওখানে।
বিদেশে পড়াশোনারত অবস্থায় ছুটিতে এসে মানিক একবার গিয়েছিল নানীকে দেখতে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওটাই ছিল নানীর সাথে ওর প্রথম শেষ দেখা। বেশ কয়েক বছর পর ওখানে গেল মানিক।
এটা নানীর মৃত্যুর মাস কয়েক আগের ঘটনা। তখনও তিনি বেশ অসুস্থ। তবে হাটাচলা সহ স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতেন। নানীর সাথে ওটাই ছিল মানিকের শেষ দেখা।
পনের দিনের ছুটির প্রায় সবটায় মানিক ওর নানীর সাথে কাটালো। ওর পায়ের অবস্থা দেখে নানী কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারেনি একদম হতভম্ব নির্বাক হয়ে ছিলেন রোকেয়া বেগম। এই ভয়টায় পেত মানিক। তায়তো যুদ্ধ থেকে ফিরে ঐ অবস্থায় নানীর মুখোমুখি হতে সাহস হয়নি।
কিন্তু পা হারিয়েও মানিকের মনের জোর দেখে খুশি হলেন রোকেয়া বেগম। বুঝলেন চরম বাস্তবতাকে সাথে নিয়ে মানিক বাচতে শিখেছে।
এই কয়েক বছরের ব্যবধানে ওদের সম্পর্কের মধ্যে কেন জানি একটা জড়তা এসে বাধ সেধেছে সেকথা বুঝলো মানিক। কেন জানি দুজনের কেউই সেই আগের মত মন খুলে আর কথা বলতে পারছে না। ভাব আছে কিন্তু ভাষাগুলো যেন ভুলে গিয়েছে।
মানিক দেখলো এ কয় বছরে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। বড় বাড়ীটা যেন জনশূণ্য মনে হচ্ছে। শিউলিদের বাড়ীর দিকটাতে একটু বেশী নিস্তব্দ মনে হলো। ঘর গুলো কেমন যেন অনেক পুরনো আর মেরামতের অভাবে ভেঙ্গে পড়ছে অনেক জায়গায়। কেউ থাকে না সেখানে। শুধু একজন বৃদ্ধ কেয়ার টেকার বাড়ীটা পাহারা দিয়ে রাখে।
একদিন বিকালে বৃদ্ধ কেয়ারটেকারকে দেখতে পেয়ে মানিক ভাবলো ওর সাথে একটু কথা বলবে।
ওকে ডাকতেই বোঝা গেল ও একটু বিরক্ত হলো ও। মানিকের দিকে না তাকিয়েই জবাব দিল -কারো সাথে কথা বলা আমার মানা।
কথাগুলো বলতে বলতে বৃদ্ধ পাচিলের দেয়ালের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে চোখের আড়ালে চলে গেল।
দেয়ালটা আগে দেখেছে কিনা মানিক মনে করার চেষ্টা করলো। কিন্তু না, আগেতো দেয়ালটা ছিল না, বুঝলো দেয়ালটা নতুন তৈরী।
-নানা মামাদের মধ্যে কি সম্পর্ক ভাল না!
ঐ দিন সন্ধ্যায় মানিক নানীর কাছে জানতে চায়লো ব্যাপারটা।
-সে সব তুই জেনে আর কি করবি। বিরক্ত আর আহত কণ্ঠ রোকেয়া বেগমের।
দুজনেই বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ।
-ওরা কেউ আর আসে না এ দিকে। তবে শিউলি খবর রাখে মাঝে মধ্যে। নানীই নীরবতা ভাঙলেন।
একটু থেমে রোকেয়া বেগম জিজ্ঞেস করলেন -দেশে ফিরে কি করবি কিছু ঠিক করেছিস?
ঠিক কোন বিষয়টা নানী জানতে চাচ্ছে তা পরিস্কার হলো না মানিকের কাছে। ও নীরবে নানীর মুখের দিকে তাকালো।
আর কোন কথা হলো না সে ব্যাপারে।
চলে আসবার দিন নানী একটা মূহুর্তের জন্যও মানিককে চোখের আড়াল করলেন না। ঐ অসুস্থ শরীরটা নিয়েও লাঠিতে ভর করে করে খেয়া ঘাট পর্যন্ত আসলেন তিনি।
খেয়াটা তখনো আসেনি। দুকুল ছাপিয়ে পানিতে ভরপুর গাঙটার পাড়ে বট গাছের ছায়ায় বসলো দুজনে। খেয়া আসার জন্য অপেক্ষা। কোন কথা হলো না।
নানীর কোঠরীর ভিতর ঢুকানো চোখ দুটো পরিস্কার না দেখা গেলেও মানিক বুঝল তা ছিল অশ্রুশিক্ত। রোকেয়া বেগম ও মাঝে মধ্যেই খুক খুক করে কাসতে লাগলেন।
খেয়াটা ঘাটে ভিড়লো। মানুষের কোলাহলে নীরবতা চাপা পড়লো। নীরব ঘাটটা মূহুর্তের মধ্যেই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠলো।
মানিককে বিদায় দিতে আসা অন্যান্যরা চঞ্চল হয়ে ওকে খেয়াই ওঠানের জন্য তৎপর হয়ে উঠলো। আগে উঠলে একটু ভাল জায়গা পাওয়া যাবে সে জন্যই ওদের এই ব্যস্ততা।
নানী মানিককে শেষ বারের জন্য বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তার কান্নার স্বরটা পরিস্কার হয়ে উঠলো। মানিককে তার বাধন থেকে ছাড়ার আগে নানী মানিকের কানে কানে কি যেন একটা বলতে চায়লো। কান্নায় গলার স্বরটা ধরে আসায় আর ঘাটের কর্মব্যস্ততার শব্দে নানীর কথাগুলো পরিস্কার বুঝতে পারলো না মানিক।
খেয়াতে উঠে বসতেই খেয়াটা চলতে শুরূ করলো।
মানিকের মনে হতে লাগলো ওর বুকের ভিতর কোন ভীষন স্পর্শকাতর জায়গার সাথে লেগে থাকা কোন একটা কিছুকে কেউ যেন ধীরে ধীরে টান দিয়ে ছিড়ে ফেলছে। বুকটা ফেটে যেন জীবনটা এখনই বেরিয়ে যাবে।
যতক্ষন দেখা যায় মানিক তাকিয়ে ছিল ঘাটে দাড়িয়ে থাকা নানীর দিকে। দূরত্ব বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে ওপাড়টা ঝাপসা হয়ে হারিয়ে গেল।
নানীর সান্ন্যিধ্য ছিল মানিকের কাছে অমৃতের মত। তার কোলে মাথা রাখলে দেহ মন দুইই জুড়িয়ে যেত। কিন্তু কোথায় পাবে সে অমৃত। সারাক্ষনই ও সেই অমৃত্যের সন্ধান করে। কোথায় না ছুটে বেড়ায় সে সন্ধানে। কিন্তু সে যেন এক মরিচিকা, দেখা দেয় কিন্তু ধরা দেয় না।