নিজেকে নিয়ে ভাবার প্রয়াসে ছন্দ কবিতা 'বাবাকে খুব পড়ে মনে'।

আপডেট: 2022-08-10 12:02:42

বাবাকে খুব পড়ে মনে

 

আপন যারা সবাই তারা
শুয়ে আছে জনে জনে আমাদেরই গোরস্থানে।
ঘুমিয়ে সবাই চির নিদ্রায়, নাম লেখা সব সমাধিশিলায়।
বাবা, দাদা,পরদাদা আর তাঁদের দোসর
সবাই আছে মিলে মিশে, নেইকো কারো কোন ওজর।

ছোট বড় নির্বিশেষে, শিলাগুলো দাঁড়িয়ে আছে শীর্ষদেশে
লাইন বাধা সারি সারি, দেখতে সব লাগছে ভারি।
একে একে ছুয়ে দেখে, মনে মনে ছবি একে
সকাল সাঁঝে হৃদয় মাঝে করছি তাঁদের কদমবুছি।

বাবার কবর ছুঁতেই যেন,
তড়িৎ ঝলক বইছে কেন নিরবধি!
মাথা থেকে শরীর ঘুরে পা অবধি।
গায়ের জোর সব ফুরিয়ে গেল, পা দুটো যেন অবশ হল
চক্ষু দুটো ঝাপসা হলো, অশ্রু জলে ভিজে গেল।
হাটু গেড়ে বসে পড়ে থমকে গেলাম
শিলার গায়ে হেলান দিয়ে, সামলে নিলাম।

রোজ বিকেলে অফিস শেষে
ফিরত বাবা ক্লান্ত দেহে মলিন বেশে।
ফিরলে বাবা বোঝা যেত, সব কোলাহল শান্ত হত।
সন্ধ্যে হলে খেলা ফেলে, কাজ সেরে সব হাতে হাতে,
পড়তে বসা একই সাথে।

সংসারটা ছিল বেজায় বড়।
বারো ভাই বোন সব হলে জড়
যেন বিদ্যালয়ের ক্লাস রুম, হট্টোগোলের পড়তো ধুম।
বসতো বাবা ছড়ি হাতে, কম কিছু না কোন মাস্টার হতে
দেখতো পুরু চশমার ফাঁকে, ধরবে কাকে হাতে নাতে।
চড় থাপ্পড় আর বেতের বাড়ি, দুষ্টুমি বন্ধে মহা বড়ি।

বাবার মার যখন খেতাম, শরীরে খুব ব্যথা পেতাম
মনে খুব কষ্ট হত, দুচোখ বয়ে জল গড়াত!
মনে হতো বাবা আমায়, ভালবাসে না কোন সময়।

সে ভাবনা ঠিক ছিল না, তা এখন বুঝি
সব ভুলে তাই, এখন কেবল বাবাকে খুঁজি।
যদি বাবার হাতে কোনমতে মার না খেতাম
আমরা সবাই মানুষ নয় বানর হতাম।

যে বাবাকে ‘আপনি’ ডেকে ছিলাম দূরে জীবন ভরে
সেই বাবাকে বক্ষ মাঝে লালন করি সকাল সাঁঝে।
বাবার কথা পড়লে মনে, অশ্রু ঝরে দু’নয়নে।
পাছে কেউ দেখল নাকি, মুখ লুকিয়ে লজ্জা ঢাকি।
বিশেষ করে খোকা আমার জানলে পরে
দেখবে শুধু চক্ষু মেলে ফ্যাল ফ্যালিয়ে।

যদি খালি খোকাকে বলি, চল, আমাকে তুই ‘আপনি’ বল 
চড় থাপ্পড়, বেতের বাড়ি ওসব না হয় দিলাম ছাড়ি।
ওরে বাবা খোকা তবে অক্কা যাবে, তানা হলে
তেড়ে মেড়ে আমায় ছেড়ে যাবে চলে।

ভালবাসা সেই একই আছে, ধরণটা শুধু পাল্টে গেছে
সময়ের দাবি মানতে হবে, তানা হলে সব উল্টে যাবে।