Heading
আপডেট: 2022-08-24 09:31:30
-গত কাল গ্রামের এক বৃদ্ধ মারা গেল, তিনি আমার রক্তের সম্পর্কিত কেউ ছিল না। এখানে মানে গ্রামে সবাই সবার আপনের মতই। তাই মনটা খারাপ।
-আগে এমন হত না, যে কোন মৃত্যু মনকে তেমন ভাবে দোলা দিত না। কোন মৃত্যুকে মনে হত একটা সংখ্যা ছাড়া কিছু না। মৃত্যু মানে আয়োজন করে জানাজায় শরিক হওয়া, গদ বাধা কিছু সমবেদনার কথা বলা ইত্যাদি। কিন্তু আজকাল প্রতিটি মৃত্যু আমার হৃদয়ে দোলা দেয়। মনে হয় কোথায় যাচ্ছে এত সব কাছের মানুষগুলো?
আগে মানে আমার যখন কর্ম ব্যস্ততা ছিল তখন কার কথা বলছি।
দীর্ঘ দিনের চাকরী থেকে অবসর নিতে নিতে ছেলে মেয়েরা সব বড় হয়ে যে যার জগতে চলে গেল। তাই শহরে থাকার তেমন কোন অছিলা খুজে না পাওয়াতে চলে এসেছি একদম উৎপত্তির কাছে অর্থাৎ পিতৃ পুরুষের ভিটেই।
বর্তমান আধুনিকতার সব ছোঁয়া মোটামুটি লাগলেও এখানে প্রকৃতি আছে, মানুষের মধ্যে সরলতা আছে। এখানে মানুষ এখনো অল্পে তুষ্ট থাকে। এখানে এখনো মানুষ একে অপরকে সময় দেয় সঙ্গ দেয়। উপরে উঠার প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ দুনিয়াই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বাস করে না।
আমার বাল্য কিছু স্মৃতি ছাড়া দীর্ঘ ব্যস্ত জীবনে কালেভদ্রে আসা যাওয়া মধ্যেই সীমিত এখানকার সাথে সম্পর্ক। তাই প্রথমে এখানে আসার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিলাম কিছুটা।
কিন্তু গ্রাম বাংলার বোধহয় এ এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এখানে কেউ কাউকে একা থাকতে দেয় না। কোন না কোন ভাবে গ্রামের মানুষ একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। আর সে সম্পর্ক রক্তের না আত্মার।
শহর থেকে আসা পুরনো এক বন্ধু যে এসেছে আমাকে দেখতে এই গ্রামে, তাকেই বলছিলাম কথাগুলো। নয়ন ওর নাম। দীর্ঘ চাকরী জীবনে আমরা অনেকটা সময় একসাথে কাজ করেছি। অবসর গ্রহনের পর ও বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। ওখানে ছেলে মেয়েদের সাথে থাকে, ভাল চিকিৎসা, প্রবীণ ভাতা এ ধরনের অনেক সুযোগ সুবিধা আছে বলে ও জানালো আমাকে।
-তা তুই এখানে এই গ্রামে কি ভাবে থাকিস, আর কেমন আচিস বল?
ওর প্রশ্নের জবাবে কথাগুলো বলাতে নয়ন আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল।
ওর সাথে আমার দীর্ঘ দিনের স্মৃতি আছে, অনেক সুখ দুঃখের স্মৃতি। সব জীবনের মত চড়াই উৎরাই পার করে আমাদের জীবনটাও কেটেছে।
কিন্তু তখন জীবনের মানে ছিল কেবলই উপরে উঠা আর সেটার অর্থ ছিল একে অপরকে টপকে যাওয়া। আর টপকাতে হলে কাছের মানুষদেরকে ছাড়িয়ে যেতে হয়। প্রতিযোগিতার সেটাই চিরন্তন নিয়ম।
আর সে প্রতিযোগিতায় সবাইকে পরাজিত করে একমাত্র নয়নই শিখরে উঠেছিল।
সে সব স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে আমারা একে অপরের চোখে চোখে তাকালাম। অনেক না বলা কথা মনে পড়ল। উপরে উঠার প্রতিযোগিতাই চাকরী জীবনের শেষের দিকে পিরামিডের শীর্ষভাগ যখন সরু থেকে সরু হতে থাকে অর্থাৎ প্রতিযোগিতা তখন অধিকতর তীব্র হয়ে ওঠে, তখন প্রাপ্যতার যোগান কমে যেতে থাকে আর সে পর্যায়ে আমরা দুই বন্ধু একে অপরকেও টপকানোর জন্য কত পন্থাই না অবলম্বন করেছি।
সে সব কথা কেউ কাউকে কখনো বলতে পারবো না। সেগুলো যেন জীবনের নিষিদ্ধ অধ্যায়।
প্রতিযোগিতার সে খেলার নিয়মই ছিল সেগুলো। আমরা ছিলাম দাবা বোর্ডে সাজানো সৈন্য সামন্থের মত। নিজের ইচ্ছে মত নড়তে পারিনি কখনো, নড়েছি অদেখা এক শক্তির টানে, প্রতিযোগিতার নিয়মের কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে।
সে সব চিন্তা করে দু জনই মৃদু হাসলাম।
স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল। ঠিক হল আমি কি করে সময় কাটায় এ গভীর গ্রামে সেটা ওকে দেখানোর জন্য কাল প্রত্যূষে আমরা বেরুবো।
-খোকা, খাবার লাগিয়েছি তোমরা খেয়ে নাও।
পরাণ দা, অশীতিপর বৃদ্ধ, ওরা বংশপরাপর আমাদের বাড়ীতে আছে। আমার পরদাদা, যিনি আমাদের এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি ওর বালক বয়সী অনাথ পরদাদাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। পাহাড়ে ভ্রমন উপলক্ষে আমার পরদাদা এক রেস্ট হাউজে তকে দেখেছিলেন সেখানে সে কাজ করত। ওর সরলতা আমার পরদাদার নজর কেড়েছিল। সেভাবেই ওখানকার কেয়ারটেকারের সম্মতিতে তিনি তাকে এখানে এনেছিলেন। তার পর থেকে ওরা বংশ পরস্পর এই ভিটেতেই থেকে গিয়েছে।
পরদাদা বেচে থাকতেই তাকে পাহাড়ী একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে প্রায় দশ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত দেয়াল ঘেরা পুরনো জমিদার বাড়ীর আদলে তৈরী আমাদের এই ভিটে বাড়ীর এক কোনে ওদের জন্য বসত বাড়ী তৈরী করে দিয়েছিলেন।
একটা মেয়ে আর একটা ছেলে পরাণ দা’র। মেয়েটার বিয়ে হয়ে স্বামী সংসার নিয়ে অন্যত্র থাকে আর ছেলে বউ আর এক নাতি নিয়ে পরাণ দা এখানে থাকে। তার স্ত্রী গত হয়েছে অনেক দিন আগে।
পরাণ দা’র ব্যাপারে নয়নের প্রশ্নের জবাবে অনেক বড় কাহিনী সংক্ষেপে ওকে বর্ণনা করলাম।
-ওর ছেলের বউটা রান্না বান্না করে। আমার পীড়াপিড়িতে পরাণ দা’র পরিবার আর আমার রান্না এখানেই একসাথে হয়। আমি যেদিন তাড়াতাড়ি ফিরি সেদিন বলতে গেলে আমরা একসাথে বসেই খেয়ে নিই। আর দেরী হলে খাবার ঢেকে ওরা চলে যায়, আমি নিজের মত খেয়ে নিই।
আমরা দুজন খেতে বসলাম পরাণ দা পরিবেশন করতে লাগলো।
পরাণ দা’র এ এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, ওর মুখাবয়ব একই রকম থাকে সব সময়, ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই ও সুখী না দুখী।
ওর কথা বার্তা পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি সব কিছুই এখানকার অন্য দশ জনের মত কিন্তু ওর অবয়ব বলে দেয় ও এখানকার কেউ নয় অন্য কোন খানের। বিশেষ করে ও যখন একাকী অন্য মনোস্ক হয়ে বসে থাকে তখন ওকে গোড়া আগলা হওয়া এক ভিন দেশী বলে মনে হয়।
খেতে খেতে নয়ন পরান দা’কে খুব নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল।
-ওদেশে আমিও তোর পরান দা’র মত।
নয়নের কথা পুরোপুরি বুঝলাম না। তবে রাত হয়েছে তাই কথা না বাড়িয়ে ওর শোয়ার বন্দোবস্ত করতে বললাম পরাণ দা’কে।
যাহোক, আমি এই গভীর গ্রামে কি করে সময় কাটাই তা প্রবাসী বন্ধু নয়নকে দেখানোর জন্য পরদিন সকালে দুটো বাই সাইকেলে করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।
স্থানীয় সরকারের আশীর্বাদে গ্রামের সরু পিচ ঢালা পথ ধরে তারপর আরো কিছুটা একপেয়ে পথে সাইকেল চালিয়ে আমরা দুই একরের মত জায়গা জুড়ে একটা কমপ্লেক্সে হাজির হলাম। বেশ কিছুটা উঁচু করা মাটির মেঝের উপর বাশের বেড়া আর উপরে টিনের দোচালা বিশিষ্ট চার খানা ঘর বিশিষ্ট সামনে বেশ বড় একটা খেলার মাঠ ওয়ালা চত্তরটা।
তখন সকাল প্রায় সাতটা। স্কুল শুরু হয় আটটায়।
-জঙ্গল ঘেরা এই জায়গাটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল তাই এখানেই স্কুলটা তৈরী করেছি।
আমার কথার প্রেক্ষিতে নয়ন কোন কথা বলল না। ভাবলাম ওর বোধহয় ব্যাপারগুলো পছন্দ হচ্ছে না।
যাহোক, ওকে নিয়ে আমি ছোট্ট এক কামরা ওয়ালা একটা কক্ষে প্রবেশ করলাম। সেটা ছিল টিচারদের বসার রুম। একটা কাঠের টেবিল আর দুটো কাঠের চেয়ার সাথে তিনটে কাঠের সিঙ্গেল বেঞ্চ।
-মাস্টার ভাই, আপনি আজ এত সকালে! একজন অল্প বয়সি টিচার আমাকে সালাম দিয়ে কথাটা জিজ্ঞের করলো।
-হ্যে, এমনিতেই। সব টিচাররা আসলে এখানে আসতে বলবে। আর সব ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের বড় রুমটাতে একত্রে বসাবে। আজ আমাদের সাথে একজন দামী মেহমান আছে তার সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেব।
নয়ন আমার দিকে তাকাল, বলল না কিছু।
আটটা বাজতেই স্কুল শুরুর ঘন্টা বাজলো।
-গত তিন বছরে স্কুলটাকে তিন ক্লাসে উন্নীত করা গেছে। অবকাঠামো তৈরী আর বিশেষ করে বাচ্চাদের দুপুরের খাবারের আয়োজনের জন্য ধীর গতিতে এগনোর পরিকল্পনা করেছি। সব মিলে প্রায় পঞ্চাশ জন ছেলে মেয়ে পড়ে এখানে।
ওদের আলোচনার ফাঁকেই ছোট্ট চত্তরটা বাচ্চাদের পদধ্বনি আর গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠলো।
আমি নয়নকে নিয়ে বড় রুমটা যেখানে সবাই একত্রিত হয়েছে সেখানে প্রবেশ করলাম। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সমস্বরে আমাদের অভিবাদন জানালো।
সবাইকে খুব উৎফুল্ল আর প্রাণবন্ত মনে হল নয়নের চোখে। প্রতিটি টিচার যে ভাবে ছাত্র ছাত্রিদেরকে মেহমান আসা উপলক্ষে ঠিকঠাক মত বসার জন্য খুব আন্তরিকতার সাথে তাড়া দিতে লাগলো। সবাইকে খুব অনুপ্রাণিত মনে হল নয়নের কাছে।
সবাই উপবিষ্ট হওয়ার পর বয়স্ক হেড মাস্টার সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে নয়নের দিকে নির্দেশ করে বললেন – আজ আমাদের মধ্যে একজন খুব নামী ব্যক্তিত্ব হাজির আছেন। তিনি সারা জীবন কৃতিত্বের সাথে চাকরী করে নিজেকে তার ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ পদে অধিঠিত করেছিলেন। অবসর গ্রহনের পর বর্তমানে প্রবাসে অবসর যাপন করছেন।
তার সম্পর্কে হেড মাস্টারের মন্তব্যটা কেমন যেন বেসুরো লাগলো নয়নের কানে।
পিন পতন নীরবতা কক্ষের ভিতর। ছেলেমেয়েদের সবার দৃষ্টি নয়নের দিকে নিবদ্ধ।
-আমাদের আজকের অতিথির মত জীবনে কে কে বড় হতে চাও?
ক্লাসে উপস্থিত সবাই হাত উপরে উঠিয়ে সাড়া দিল।
-বল কে কে বড় বিজ্ঞানী হতে চাও?
হেড মাস্টারের প্রশ্নের উত্তরে কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী হাত উচু করল। তারা কোন কোন বিজ্ঞানীদের মত হতে চায়, সে প্রশ্নের জবাবে ছাত্র ছাত্রীরা আইনেস্টাইন, টমাস এডিশন এমন কি স্টেফেন হকিং এর নাম উচ্চারণ করল।
প্রত্যন্ত গ্রামের এই সব কচি কচি ছেলে মেয়েদের মুখে অত নামি দামি বিজ্ঞানীদের নাম শুনে নয়ন কিছুটা হতবাক হয়ে গেল।
-আমরা তোমাদের মত প্রতিভাবান ছেলেমেয়েদেরকে পড়ানোর সুযোগ পেয়ে রীতিমত গর্বিত। আমরা এখানে এ দেশের ভবিষ্যতের ডাক্তার, বিজ্ঞানী, রাস্ট্র নায়কদের তৈরির মহান কাজে নিয়োজিত।
এই অজপাড়াগায়ের মাটির ঘরের স্কুল টিচারদের প্রেরনা দেখে আবিভুত হল নয়ন।
-তোমরা যে সমস্ত বিখ্যাত মনিষীদের নাম বললে তারা যে সমস্ত দেশে জন্মেছিলেন আমাদের আজকের অতিথি সে রকম একটা দেশেই অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। এখন আমরা সবাই তার জীবনের সাফল্যের কথা শুনবো।
হেড মাস্টারের ঈশারাই উঠে দাঁড়াল নয়ন।
-আমি যখন তোমাদের মত বয়সি ছিলাম তখন একবার স্কুলের সামনে খেলার মাঠে সার্কাস অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। সার্কাসে গতানুগতিক সব কিছুই ছিল যেমন, রশির উপর ঝুলে নানা রকম লোমহর্ষক খেলা ইত্যাদি। কিন্তু সেদিন মাঠের এক কোণে মুল প্যান্ডেলের বাইরে খোলা মাঠে দেখান একটা খেলা আমার মন কেড়েছিল।
সবাই মন্ত্র মুগ্ধের মত নয়নের কথা শুনছিল।
-বিশ ত্রিশ ফুটের মত লম্বা একটা লোহার খুটি পোতা, তাতে তেল লাগান পুরপরি পিচ্ছিল। হান্টার হাতে রিং মাস্টার জড় হওয়া সবাইকে ওই পিচ্ছিল লোহার খুটির শিখরে উঠার জন্য আহবান করল। যে উঠতে পারবে তার জন্য পুরষ্কার হিসেবে পাশেই চকচকে নতুন একটা বাই সাইকেল রাখা ছিল।
-উপস্থিত প্রায় সকলেই টিকিট কেটে এক এক করে চেষ্টা করে বিভিন্ন উচ্চতা থেকে পিছলে পড়ে পড়ে ব্যর্থ হল। কেউই কৃতকার্য হয়ে লোভনীয় পুরস্কারটা জিততে পারল না।
সবার মত আমিও অবাক হয়ে শুনছিলাম নয়নের কথা। কি বলতে চায় ও। গল্পটা কি ভাবে শেষ করবে নয়ন! সে ভাবনায় ডুবে ছিলাম।
-রিং মাষ্টার তখন পাশে বাধা বানরটাকে উদ্দেশ্য করে ওর হাতের হান্টারটা দিয়ে কয়েকবার ওকে ঈশারা করে বলল- কিরে তুই কি পারবি প্রাইজটা জিততে?
-বানরটা কি বুঝল জানিনা, তবে আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসল। যেন উন্নাসিকতা। তারপর সেই তৈল মাখানো লোহার পোলটার কাছে গিয়ে কয়েক লাফে অতি সহজে পোলটার মাথায় উঠে উল্লাস প্রকাশ করতে লাগলো।
-সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে সেদিকে। খেলা জিতে আত্মতুষ্ট বানরটি সোজা রিং মাস্টারের গাড়ীর ক্যবিনে উঠে আরামে বসলো।
গল্প শুনে সবাই চুপ, কারো মুখে কোন টু শব্দটি পর্যন্ত নেই।
সেদিন গল্পটা শেষ করে নয়ন আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেছিল।
সে অশ্রু সিক্ত নয়নে ছেলেমেয়েদের সামনে হাত জোড় করে দাড়াল।
-আমি করজোড়ে সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। কারণ আমিই রিং মাস্টারের সেই আত্মতুষ্ট প্রশিক্ষিত বানর। তোমরা সবাই মানুষের মত মানুষ হবে, অনেক বড় হবে তোমরা সবাই। বড় তোমাদের হতেই হবে কারণ তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আর এখানে যারা আমার পাশে বসে আছেন তারা এক একজন জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার নিবেদিত কারিগর।
অশ্রুশিক্ত নয়ন দুটো মুছে নিয়ে ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আমাকে একটু সুযোগ দিলে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রবাস জীবন শেষ করে ফিরে আসব গ্রামে। জাতির ভবিষ্যতের যোগানদাতা বিদেশ তো নয়ই, এদেশের শহর নয়, তা হল এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলো। এখানেই সত্যিকারের জাতির ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে। তাদেরকে গড়তে হবে। এখনি সময় ঋণ শোধের।