Heading
আপডেট: ১৫ Jun ২০২৩, ১০:৩৯
শূন্য সে জলপথ, ঘটিছে অবিরাম বারিপাত
বাবু বসে বজরায়, যতদূর চোখ যায় তা দেখে চিত্ত জুড়ায়।
পাশে বসে অমাত্য সব হেসে হেসে, খোশগল্পে মেতে রয়।
জনশূন্য নদীতট, ভিড়বে বজরা সমুখে ঘাট।
বাবু রাগিয়া কয় –‘ঘাটে দেখি একটি কুলিও নাই।
এখন কি উপায়! অধমের দল গেল কোথায়?’
রাজাবাবু খুব বিরক্ত আজ, আছে হাতে মেলা কাজ
জড় হবে আম জনতা, দিতে হবে বক্তৃতা।
না হলে কত, অজ্ঞান জনতা শত
বঞ্চিত হবে মূর্খ রয়ে যাবে, হতভাগার দল যত!
খোলা প্রান্তর, যত নারী ততো নর
দলে দলে সবে বসবে ভুতলে।
বাবু বসবেন কুরসিতে, মোটা গদি আটা তাতে
বাবু, ইয়া বড় বপু, অচ্ছুতের সাথে বসবে কি মাটিতে!
কুশলী নায়েব সে মতে, কুরসি নিয়েছে সাথে।
বজরা হতে তা নামাতে তটে
রেখেছিল বলি গোটা দুই কুলি, থাকতে ঘাটে।
কি ঔদ্ধত্য বেটার, কটা মাথা ঘাড়ে তার!
বাবু গেলেন ক্ষেপে, ঘাটে কুলি না দেখে।
রেগে মেগে বিরক্তি ভরা মুখে
বাবু খোঁজেন তাকে দ্বিনেত্র লাগিয়ে চোখে।
অদূরে গাছ তলে, শুয়ে অশ্বত্থ মুলে
কলাপাতা মুড়ে পুরো দেহ জুড়ে
বাচিয়ে নিজেকে কোনমতে, অনিবার বর্ষণ হতে
ঘুমের কোলে পড়েছে ঢলি, কৃশাঙ্গ এক কুলি।
ঘুমাচ্ছে ব্যাটা নচ্ছার ঘটিরাম! পড়িছে বর্ষণ অবিরাম
ব্যাটা মানুষ না গন্ডার, এতটুকু বোধও কি নেই তার?
বাবু রাগে গরগর, পেয়াদা ডাকে করে চিৎকার
কাঁচা ঘুম কেটে কুলি আসে ছুটে।
বেচারা কুলি, অতিবড় কুরছি দেখে কহে ঢোক গিলি
-এতবড় কুরসিখানা, নামানো যাবে না, ফেললেও কেটে।
নায়েব বলে রেগে –বটে, তাহলে বাবু নামবে না ঘাটে!
আরে গণ্ডমূর্খ ঘটকর্পর, কিছু কি নেই ঘটে তোর?
নামবে না রাজা মহাশয়, যদি কুরসি না নামায়
মূর্খ প্রজা! রাজাসন ছাড়া রাজা! তা কখনো হয়!
বংশবদ পারিষদ, সবাইকে রাজা বলেন ডেকেঃ
‘আমি জমিদার, জ্ঞানদান আমার দায়ভার
সেটা পুরো আছে আমার কাছে, মোর ঘটে।
তোমরা শুধু বলবে এক জোটে, ‘তা বটে, তা বটে’।
‘আমার কথায় সব পারিষদ, দু এক মিনিট বাদ বাদ
করতালি দেবে না শুনে না ভেবে, বলবে আহা আহা!
শুনে তা জনতা শত, শিয়ালের মত করবে হুক্কা হুয়া।
মূর্খ জনতা, যা বলি যদি বুঝতো সকলি, তবে হতো নেতা
তাহলে জনতা নয়, থাকতো তারা ক্ষমতায়।
রাজ্য চালাতে লাগে বংশবদ পারিষদ, আর বাধ্য জনতা।
চোষা পারিষদ আর পোষা জনতা, এরাই রাজার ক্ষমতা।
রাজা হতে কুরসি চায়, কুরসি ছাড়া কি রাজা হয়?
যদি হয় সবে, রাজার অনুগত আর অন্ধ অনুসারী
তাহলেই হবে, রাজত্ব থাকবে চিরকাল ধরি।