Heading
আপডেট: ১৬ মে ২০২৩, ১২:১৫
খালেক আর মালেক, একই মায়ের উদরে জন্ম দু ভাইয়ের। পিঠাপিঠি, বয়সের গ্যাপ প্রায় দু বছরের। সেভাবেই বাবা মা ওদের নাম মিলিয়ে রেখেছিল।
কিন্তু ছোট বয়স থেকেই ওদের স্বভাব চরিত্র যেন দুই মেরুর। বড় ভাই খালেক খুব চটপটে, বৈষয়িক বুদ্ধি সম্পন্ন, হিসেবে খুব পাকা এবং নির্ভরযোগ্য। ছোট ভাই মালেক চিন্তা চেতনায় একদম সাদাসিদা। বড় ভাইয়ের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। যে কোন ব্যপারেই, সে বন্ধুদের সাথে মনমালিন্যই হোক বা মায়ের বকুনি শুনে মন খারাপের জন্যই হোক, বড় ভাইয়ের কাছেই মনের কথা বলবে। বড় ভাই ওর জীবনে সব সমস্যার সমাধান।
গৃহস্থ পরিবার ওদের। ভিটে বাড়ি বাদে কিছু চাষের জমি আছে। বাবা অমেদ আলী নিজ হাতেই কৃষি কাজ করেন।
গ্রামের প্রাইমারী স্কুলেই ওদের পড়াশোনার হাতে খড়ি।
মালেক কখনোই বড় ভায়ের পিছ ছাড়ে না তাই ওকে এক ক্লাস নিচে ভর্তি করলেও সে নিজের ক্লাসে না বসে বড় ভাই খালেকের ক্লাসে যেয়ে বসতো। পরে হেড মাষ্টার সাহেব ওদের বাবাকে বলে মালেকও খালেকের ক্লাসে ভর্তি করাল। সে ভাবেই দুই ভাই একসাথে লেখাপড়া করে বড় হয়েছে।
দুজনেই ম্যাট্রিক পাশ করার পর বাবা ওদেরকে রোজগারে লাগিয়ে দিলেন।
বড় ভাই খালেক চালাক চতুর বলে ওকে গ্রামের দলিল লেখক ইসমাইল সরদারের সাথে আর সাদাসিদা ছোট ছেলে মালেককে গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা ম্যারেজ রেজিস্টার কুদ্দুস বিশ্বাসের সাথে কাজে লাগিয়ে দিলেন।
তারপর কাজ শিখে ওরা ধীরে ধীরে রোজগার করা শুরু করলে ওদের বাবা জীবিত থাকতেই দু ভাইকে পাশের গ্রামে বিয়ে দিয়ে ওদেরকে সংসারী দেখে চোখ বুজলেন।
বাবা মারা যাওয়ার পর মা ছবুরা বিবির কথা অনুযায়ী বড় ছেলে খালেক ওদের যাবতীয় সম্পত্তি দু ভাইয়ের মধ্যে সমান দু ভাগে ভাগ করে নিল।
ওদের অঞ্চল থেকে জেলা সদরে যাওয়ার উত্তর দক্ষিণ বরাবর রাস্তার সাথে লাগোয়া চার বিঘা জমিটাই বলতে গেলে ওদের মুল কৃষি জমি। জমিটা মোটামুটি আয়তকার রাস্তা বরাবর লম্বা। বড় ভাই, চতুর খালেক জমিটা পূর্ব পশ্চিম বরাবর ভাগ বা করে উত্তর দক্ষিণ বরাবর সমান দুই ভাগ করে রাস্তার সাথে লাগোয়া অংশ ছোট ভাই মালেকের ভাগে দিল। বড় ভাইয়ের উপর অগাধ বিশ্বাসের ভিত্তিতে এ জমি সহ বাড়ীর ভিটা আর অন্য কয়েক টুকরো জমি ভাগাভাগিতে মালেক কোন আপত্তি করেনি।
কাগজ কলম অনুযায়ীও খালেক ছোট ভাইকে সঠিক ভাবে অর্ধেক ভাগ দিয়েছে, হিসেব অনুযায়ী এ ব্যাপারে কারো কিছু বলার কোন অবকাস নেই।
দু ভাই যেহেতু প্রতিদিন অফিসে যায় তাই তারা দুজনেই বড় জমিটা সহ আর ছোট দু টুকরো জমি একই গ্রামের এক চাষিকে বর্গা দিয়েছে। ছোট জমি গুলো ঠিক আছে, দু ভাই সমান বর্গার টাকা পায় কিন্তু বড় জমিটার জন্য বর্গা চাষি বাৎসরিক বর্গার দাম খালেকের থেকে মালেককে প্রায় অর্ধেক দেয়াতে মালেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিলে সে বর্গা চাষিকে কারণ জিজ্ঞেস করল।
-বাবা, এটা বুঝতে তেমন কষ্ট হওয়ার কথা না। তোমার দু বিঘা রাস্তার সাথে লাগোয়া তাই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষ পশু সবাই কোন না কোন ভাবে জমির ফসলের ক্ষতি করে, আর সব সময় যাতায়াতরত গাড়ী ঘোড়ার উড়ানো ধুলাই তোমার অংশে লাগান ফসল ঢেকে থাকাতে তোমার জমিতে ফসল তেমন হয় না। তোমার ভায়ের জমিতে যে ফসল হয় বড়জোর তার অর্ধেক তোমার জমিতে হয়। আর সে ভাবেই আমি বর্গার দাম দিয়ে থাকি। এর বেশী দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
বর্গা চাষির কথাই মালেক এই প্রথম বুঝল তার বড় ভাই তার সাথে চাতুরতা করেছে। জমিটা আড়াআড়ি ভাবেও ভাগ করলে রাস্তার পাশ দু ভায়ের ভাগে সমান পড়ত।
মনে খুব আঘাত পেল মালেক। বড় ভাইয়ের উপর বেশ রাগও হল কিন্তু মেনে নেয়া ছাড়া আর উপায় কি।
-কি আর করবি, ভাগ্যি যা ছিল তাই হয়েছে তোর।
মায়ের কথাই চুপ করে সব মেনে নেয় মালেক।
ছোট ভায়ের মনোভাব জানতে পেরে চতুর খালেক ভাগাভাগিটা পাকাপাকি করে নেয়ার জন্য গ্রামের মাতব্বরদের ডেকে একটা লিখিত বন্টন নামা করে নিল। মালেক কোন ওজর আপত্তি না করে বন্টন নামাতে সাক্ষর করে দিল।
বন্টন নামাটা বড় ভাই খালেক নিজের কাছে রেখে দিল। সেটা যে রেজিস্ট্রি করা দরকার সেটা মালেকের চিন্তা চেতনার বাইরে আর বড় ভাই খালেক দলিল লেখক, সে প্রয়োজনটা বুঝলেও টাকা খরচ হবে বিধায় সেটা ওভাবেই রেখে দিল।
প্রায় বছর দশেক পর জেলা সদরে যাওয়ার রাস্তা চার লেনে চওড়া করে পাকা করার পরিকল্পনা গ্রহন করল সরকার। বিষয়টা এলাকার মানুষ জানার আগে দলিল লেখক ইসমাইল সরদার আর তার যোগ্য সাগরেদ খালেক জানতে পারল।
ওরা দুজন গোপনে খোজ নিয়ে জানতে পারল যে, মালেকের দু বিঘা জমির প্রায় পুরোটাই অধিগ্রহণের আওতায় পড়বে। ওরা আরো জানলো যে, সরকার অধিগ্রহণের জন্য জমির মালিককে তিনগুণ মুল্য পরিশোধ করবে।
-সে তো অনেক টাকা খালেক!
খালেকের ওস্তাদ পুরনো দলিল লেখক ইসমাইল সরদার ক্যালকুলেটর টিপতেই তার লোভাতুর চোখ দুটো চক চক করে উঠল।
টাকা আর বুদ্ধির জোরে ইসমাইল সরদার এখন বলতে গেলে গ্রামের মাতব্বর। গ্রামের সাধারণ মানুষের সবারই জমির কাগজপত্র তার কাছে থাকে। জমি বেচাকেনা ভাগাভাগি ইত্যাদি ইসমাইল সরদার ছাড়া করা যায় না।
-তোর ছোট ভাইতো দেখছি আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে!
ওস্তাদের কথায় অনুগত সাগরেদ তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
-তুই কি বন্টন নামা রেজিস্ট্রি করেছিলি?
-না, কেন বলত ওস্তাদ?
কি যেন একটা ভেবে নিল পুরনো দলিক লেখক, ইসমাইল সরদার।
-আচ্ছা, সেটার কোন কপি কি মালেক বা অন্য কারো কাছে আছে?
-না, নেই।
-শোন, আমার বুদ্ধি শুনে জমি ভাগ করে গত দশ বছর বর্গার মেলা টাকা পেয়েছিস আমি তো তার কোন ভাগ চায়নি, তাই না?
খালেক মাথা নেড়ে হ্যে বলে।
-এবার কিন্তু অনেক অনেক টাকার ব্যাপার। এমনি এমনি তো আর কিছু হবে না, এবার আমাকে ন্যায্য হিস্যা দিলে আমি তোকে একটা বুদ্ধি দিতে পারি।
খালেক তাকাল ওস্তাদের চোখে।
-এটা তো আসলে তোর পাওনা না, তাই যেটা পাবি তার পুরোটাই তোর লাভ। কাঁচা টাকা বুঝলি। ঠিক আছে, যা পাবি তার অর্ধেক আমাকে দিতে রাজি থাকলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি।
লোভী খালেক তার ওস্তাদের প্রস্তাবে সাই দিল।
-এক কাজ কর, তুই তোর ছোট ভাইকে ডেকে ওর গা মাথায় হাত বুলিয়ে সহানুভূতির কথা বল। ওর জমিতে চাষ না হওয়াতে এত বছর ধরে ও বর্গার টাকা কম পায় বলে দুঃখ প্রকাশ কর। তারপর জমিটা লম্বালম্বি ভাগ না করে আড়াআড়ি ভাগ কর যাতে রাস্তার সাথের জমির তুই অর্ধেক পাস।
ওস্তাদের পরামর্শ মত খালেক ওর ছোট ভাইকে সব বলল। বড় ভায়ের এ মহানুভবতায় মালেকের চোখ দুটো কৃতজ্ঞতার অশ্রুতে ভিজে গেল।
চতুর খালেক ওস্তাদের উপর এক ধাপ বেশী ওস্তাদি করে ছোট ভায়ের সাথে ওদের জমি নতুন ভাবে ভাগ না করে অদল বদল করে নিল। কৃতজ্ঞতা ভরা জল টলমল চোখে মালেক রাজী হওয়াতে খালেক আর দেরী না করে ওর ওস্তাদ ইসমাইল সরদারের সাক্ষীতে নতুন করে বন্টন নামা তৈরি করে দুই ভাই সাক্ষর করে রেজিস্ট্রি করে নিল।
-ওস্তাদের প্রকৃত সাফল্য, শিষ্য যখন তাকে ছাড়িয়ে যায়। তুই তো আমার জীবনটা সার্থক করলি খালেক। আমি বললাম আধাটা নে, তুই পুরোটাই নিলি।
মৃদু হেসে খালেকের পিঠ চাপড়ে দিতে দিতে কথাটা বলল ইসমাইল সরদার।
-চাচা, তুমি আমার অংশের টাকা এখন থেকে মালেককে দিবা, আমি ওর সাথে জমি বদল করে নিয়েছি। এখন থেকে আমার জমি রাস্তার সাথে। ও আমার আদরের ছোট ভাই, আমি ওকে একদম ঠকাতে চায় না।
বর্গা চাষি হা করে খালেকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
পাকা রাস্তা তৈরির বিষয়টা প্রায় বছর তিনেক ধরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুরতে থাকল। আর ছোট ভাই মালেক বড় ভাই খালেকের থেকে অধিক হারে বর্গার টাকা পেতে থাকল।
সরল শান্ত মন মরা হয়ে থাকা মালেক জমির বাড়তি আয়ে প্রানবন্ত আর ফুরফুরে হয়ে জীবন কাটাতে লাগলো আর সবার কাছে বিভিন্ন ভাবে বড় ভায়ের প্রশংসাও করতে লাগলো। জমি অধিগ্রহণ বিলম্ব ও অনিশ্চিত হওয়াতে বড় ভাই চতুর খালেক মন কষ্টে ভুগতে থাকলো।
সরল শান্ত মন মরা হয়ে থাকা ছোট ছেলের মনে প্রশান্তি দেখে ওদের মা’ও খুব শান্তি পেয়ে বড় ছেলেকে নানা ভাবে দোয়া করলেন।
-খালেক, তুই বাবা বড় ছেলে হয়ে ছোট ভাই মালেকের বাবার মত কাজ করেছিস। আমি খুব খুশী।
-হ্যে, তুমিতো খুশী হবেই, তুমি তো ছোট ছেলের পক্ষে। ওর ভাল হলেই তো তুমি খুশী হও। এদিকে আমার যে কত লোকসান হচ্ছে তার খবর রাখ?
জমি অদলবদল খালেক নিজের ইচ্ছেই নিজ খুশীতে করেছে, তাহলে এখন ও এমন ভাবে কথা বলছে কেন?
বড় ছেলের কথায় মা ছবুরা বিবি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
সেদিন রাতে কথাটা তিনি ছোট ছেলে মালেককে বললে, বড় ভাই চাইলে আবার অদলবদল করতে পারে তাতে তার কোন আপত্তি থাকবে না বলে মালেক মাকে জানাল।
-বন্টন নামা যে রেস্ট্রি হয়ে গেছে, তাতো আর সম্ভব না, মা।
মালেকের মনোভাব খালেককে জানালে, খালেক আফসোস করে মাকে জবাব দিল।
মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন খালেকের দিকে।
অধিগ্রহণের কথাবার্তা চাপা পড়ে যাওয়াই খালেকের হতাসা চরম পর্যায়ে পৌছালো। ওস্তাদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন –অনেক বড় অংকের বাজেটের ব্যাপার, তাই অনেক হিসেব পত্র তো আছেই।
সরকার কবে প্রকল্প হাতে নেবে, আর শেষে এটা বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও ওস্তাদ সন্দেহ প্রকাশ করাতে খালেকের ধৈর্যের বাধ যেন ভেঙ্গে গেল।
বর্গার টাকার পুরোটাই খালেকের অতিরিক্ত আয়, দলিল লিখে সে যা ইনকাম করে তা তার সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সল্প ইনকাম করা মালেকের জন্য বর্গার টাকাটা খুব প্রয়োজন। তাইতো বড় ভায়ের প্রতি সে এত কৃতজ্ঞ।
প্রকৃতপক্ষে খালেকের হতাশার কারণ যতটা না সে বর্গার টাকা অল্প পাচ্ছে বলে তার থেকে বেশী ছোট ভাই বেশী লাভবান হচ্ছে সে কারণে।
যাহোক, চতুর খালেক নিজের চালাকির ফলে মনে মনে আফসোসে জ্বলতে লাগলো।
-আরে অত অধৈর্য হলে চলে, আজ হোক কাল হোক রাস্তা তো হবেই, না কি? আমি বলি ধৈর্য ধর।
-আপনার বুদ্ধিতে আমার আজ এই অবস্থা। এর জন্য আপনিই দায়ী।
খালেক ধৈর্য হারিয়ে মনের সব যন্ত্রণা ওস্তাদের উপর উগরে দিল। দিনে দিনে ইসমাইল সরদারের সাথে ওর সম্পর্ক একদম শেষ হয়ে গেল।
খালেকের আলাদা লাইসেন্সে থাকলেও তারা একত্রে বসে কাজ করত। সম্পর্ক শেষ হওয়ার ফলে খালেক পাশে আলাদা জায়গাতে তার অফিস সরিয়ে নিল।
তাদের মধ্যে শত্রুতা এমন পর্যায়ে পৌছালো যে, ইসমাইল সরদার মানুষদের সরলতা নিয়ে যে ভাবে সবাইকে ঠকিয়েছে তা জন সন্মুখে প্রকাশ করে দেয়ারও হুমকিও দিল খালেক।
-রাস্তা তো একদিন হবেই, আর যেহেতু বন্টন নামা রেজিস্ট্রি করেছি রাস্তা আমার জমির উপর দিয়েই যাবে। আমি অনেক টাকার মালিক হব, তার কিয়াদংশও আপনাকে দেব না, কারন আপনার সাথে আমার কোন লিখিত চুক্তি নেই।
খালেকের এই আস্ফলনে পড়ন্ত বয়স্ক ইসমাইল সরদার অসহায়ের মত তাকিয়ে রইল।
ইসমাইল সরদারের মত মানুষকে টেক্কা দিতে পেরে খালেকের সাহস আর ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়াল। সে ছোট ভাই মালেকের উপর রাগ করে বাড়ীর উঠানের মাঝখান দিয়ে পাচিল তুলে দিল।
ছবুরা বিবি বড় ছেলেকে পাচিল না তোলার জন্য অনেক ভাবে কাকুতি মিনতি করল কিন্তু খালেক মায়ের কোন বারণ না শুনল না। পাচিল তুলে দেয়ার মাস খানেকের মধ্যে তিনি হার্টফেল করে মারা গেলেন।
বড় ভায়ের এহেন ব্যবহারের কারণের মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে না পেরে আর অকালে মাকে হারিয়ে মালেক নিজেকে একদম গুটিয়ে নিল।
আরো বছর দুই পর জমি অধিগ্রহণের কাজকর্ম শুরু হল। তাতে খালেকের আস্ফালন মাত্রারিক্ত হারে বেড়ে গেল। তার এক সময়কার ওস্তাদ যার হাত ধরে তার দলিল লেখার জগতে আসা তাকে কোণ ঠাসা করে গ্রামের মাতব্বরি নিজের হাতে নেয়ার জন্য খালেক কয়েক জনকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে দলিল জালিয়াতির কেস করাল।
নিজের হাতে গড়া হাতিয়ার যখন মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে মনিবের দিকে নিশানা করে, মনকষ্টে মনিব তখন আফসোসে অনেকবার মরে, মরার আগেই মৃত্যু বরন করে। এ বয়সে সে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারায় ইসমাইল সরদার তার হাতে গড়া সাগরেদের রাস্তা খালি করে পরপারে চলে গেলেন।
এর কিছুদিন পর অধিগ্রহণের জন্য সরকারি লোকজন জমি মাপামাপি শুরু করল।
রাস্তার বিভিন্ন বাঁক সোজা করার জন্য নতুন করে রাস্তার নক্সা তৈরী করা হল। তাতে রাস্তা পরিবর্তন হয়ে খালেকের জমি থেকে সরে এসে মালেকের জমির মাঝখান দিয়ে তৈরির পরিকল্পনা হল।
খালেকের জমি পুরনো রাস্তার পাশেই রয়ে গেল আর মালেকের পুরো জমি অধিগ্রহণের আওতায় এনে সরকার মালেকের নামে নোটিস জারি করল।
জঙ্গলের হিংস্র জন্তু নিরীহ প্রাণী শিকার করে বেচে থাকে। বাঘের হাত থেকে নিরীহ হরিণ সতর্কতা অবলম্বন করে বেচে থাকে আর বিপদে পড়লে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ বাচায়। বাঘ হরিণের মাংস খেলেও হরিণ কখনো বাঘের মাংস খায় না। বাচার জন্য বাঘের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলার সামর্থ্যও ওদের থাকে না। কিন্তু তাই বলে জঙ্গল থেকে কখনো হরিণ বিলুপ্ত হয়ে যায় না। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে, ভারসাম্য রক্ষার্থে কোন এক অদেখা শক্তি কাজ করে।
এটা স্পষ্ট যে, সেই একই অদেখা শক্তি খালেকের মত লোভী ঠকবাজের হাত থেকে নিরীহ মালেককে বাচাল। এটাও স্পষ্ট যে, খালেকের সহজ সরল গর্ভধারিণী মা বা ওর ওস্তাদ ইসমাইল সরদারকে সে শক্তি খালেকের হাত থেকে বাঁচাল না। শেষে মৃত্যুই তাদেরকে মুক্তি দিল।
সে অদেখা শক্তি সবাইকে সব সময় অত্যাচারীর হাত থেকে বাঁচায় না এটা সত্য, কিন্তু কেন বাঁচায় না সেটা ভাববার বিষয়।
এসব কি সে অদেখা শক্তির একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রদর্শনের কৌশল!