জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে ছন্দ কবিতা 'সেঁউতি'।

আপডেট: ১২ Jul ২০২৩, ১১:০৯

সেঁউতি

 

লঝঝড় নড়বড় নাও খানি, জীর্ণ আজি জীবনের ঘানি টানি
সুচাগ্র গলুই হয়েছে ভোতা, রং চটে গায়ে পড়েছে ছাতা।
পদতলে কাঠ যত, হয়েছে থোঁতা কত
কালো পিচ সরে সব জোড় দুর্বল করে, হয়েছে ফুটো শত।

যৌবনা দাঁড়, সাথে শক্ত সোমত্ত শরীরের হাড়
দিবা নিশি ধেয়েছে দিশি দিশি, প্রমত্ত খেয়ারী।
না পেয়ে দিশা শেষে, কাটিছে নেশা অবশেষে,
ছিল সে নেশাচুর, এখন কাটিছে ঘোর, করিছে ভর খোঁয়ারি।

পড়া বেলা ভাঙ্গা তরী, বাতাস করিছে খেলা সাঁ সাঁ করি
ভরা তরী যায় বয়ে, নানা রঙ্গের পাল উড়িয়ে
আশেপাশে সব তরী যায় তরে, ভয়ে মন ভরে দিয়ে
কি করি আমি! না জানি মোর কি হয় খোয়ারি।

এতদিন মিছে মিছে, ভেবেছি তট কাছে কাছে
এখন এ বেলা, নেই কোথাও কোন নাও কোন ভেলা
একাএকা ছুটেছি যেন মরিচিকা পিছে।

দেহ দেয় না সায়, তবু মন চায়
পাওয়ার নেশা করে ভর, আর এক বার
খোঁয়ারি ভাঙে শেষবার।
মন চায় বৈঠা চালায়, তরী খানা কুলে ভিড়ায়
কিন্তু হায়! দেখি, নেই আর বাকি কোন উপায়।

ফুটো নাও সব যে বেতাল, ঢুকিছে জল করে কলকল
উঠেছে ঝড়! বাহিব দাড়, নাকি সেচিব জল!
দ্বিধা এসে ভিড় করে দাঁড়ায়, করিব কি বুঝে না পায়!

না সেচিলে জল, ডুবিবে তরী জল ভরি, ঠেকিবে নদী তল
বজ্র চমকায়, প্রকান্ড আক্রোশে ধমকায়।
কৃষ্ণ কালো আকাশে, দৈত্য দানব দাঁত বের করে হাসে
বলে শূন্য হাতে যেতে হবে শেষে।

নাও খানি ভরে গেছে জলে, যাবে ডুবে একটু হলে।
নিশ্চিত ডুবার আগে, বাচার ইচ্ছে মনে জাগে
ক্লান্ত দেহ পাশে নেই কেহ, তবু ভাবি দেখি সেঁচে পানি
যদি শেষে থাকা যায় ভেসে, আর একটু খানি।

গর্জিছে মেঘ অবিরাম অবিরতি, বাতাসের গতি বাড়িছে অতি।
কিন্তু হায়! বুক চমকায়। একি দেখি!
ডুবিছে দিনমনি, জলে ভরিছে তরণী, নেই মোর সেঁউতি!

কানায় কানায় জল গেছে ভরি, ধীরে ধীরে ডুবিছে মোর তরী
কোথা নেই কেঊ, আছে শুধু ঢেউ, আর খালি হাত দুখানি
সব ফুরফুরে, কোন ভার আর ধরে না পিছুটানি।

বাকি নেই কোন কথা, নেই কোন ব্যথা, বৃথা সব খেয়াকড়ি
ডুবে যাবে নাও ধীরে ধীরে, ফিরিবে সব সলিল সমাধি ঘরে
নাও ছেড়ে যাবে উড়ে, শ্বেত শুভ্র কপোত আমারে ছাড়ি।