জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে রচিত ছন্দ কবিতা 'নিরম্বু উপবাসী"।

আপডেট: ১৬ অগাস্ট ২০২৩, ১৫:০৮

নিরম্বু উপবাসী

 

গর্জিছে মেঘ গুরু গুরু, নামিছে আঁধার না হতেই দিন শুরু
কখন না জানি ফাটিবে আকাশ খানি, বুক করে দুরু দুরু।

সমুখে নদী বহিছে নিরবধি, নিরজনে নিজ বাটে
বুড়ো মোটা এক বটবৃক্ষ গোটা, দাঁড়িয়ে উচু তটে।

নদী কুলে নির্জন বট মূলে, বসে এক কৃশাঙ্গ দেহ
নিরম্বু উপোস, অস্থিসার পক্ককেশ এক পথিক কেহ।
কুঠুরিগত ছোট চোখ দুটো, রক্তিম লাল
দেখে মনে হয়, অসহায় এক জীবন্ত কঙ্কাল।

সমুখে জল বহিছে কলকল, অনেক নিচে সে তল
বটবৃক্ষ নামায়ে ঝুরি ভুরি ভুরি, শুষিছে অবিরত জল।
একই বিধাতার সৃষ্টি সবাই
কিন্তু হায় পথিক কৃশকায়, জলে নামার শক্তি নাই।

নদীতে আছে জল, গাছে পাকা বট ফল।
বসে দিয়ে ঠেস, নিরম্বু উপোস, অতিশয় দুর্বল।

উড়িছে গগনে ইচ্ছে মত, খেচর শত
উড়ে এসে ডালে বসে, খাচ্ছে ফল ফুল যত।
ফলাতে পারে না পক্ষীকুল, কোন ফল ফুল সত্য
তা বলে বিধাতা, রাখে না তাদের অভুক্ত নিত্য।

জেন সকলে, বিধাতা তা বলে
দেয় না খাবার পৌঁছে সবার নীড়ে নীড়ে।
দিয়েছেন তিনি ডানা, খুঁজে নিতে খাদ্যের ঠিকানা
জোগাড় করিতে খাবার যার যার উড়ে উড়ে।

হটাৎ পড়িল বাজ, মনে হল সব শেষ আজ!
চমকাল বিদ্যুত, গগনের বুক চিরে হাসিল মেঘদূত।


ক্ষুধার্ত কাকের দল, এনে গাছ পাকা ফল ঠোটে ধরে
বসেছিল বট ডালে, খাবে বলে মজা করে।
গর্জিল গগণ, এল ঝটিকা বর্ষণ, সব করে দিল মাটি
ঠোটে ধরা ফল ফেলে কাক দল, পালালো নিজ নিজ বাটী।

অনেক কষ্টে এসে পথিক ছিল বসে, করে মনে বিশ্বাস
তাইতো অবশেষে প্রকৃতি এসে, সাঙ্গ করল নিরম্বু উপবাস।
পথিক পেল ক্ষুধার ফল, আর তৃষ্ণার জল প্রকৃতির করুণায়
এমনি করে এ বিশ্ব চরাচরে, কৃপা করে প্রভু নানা অছিলায়।

উপবাস ভেঙ্গে শেষে, গায়ে জোর এসে
দাঁড়ালো পথিক উঠি, চলিল নিজ পায়ে হাটি।
হাটিতে হাটিতে আনমনে, তাকায় পথিক আকাশ পানে
ভিজিয়ে অশ্রু বৃষ্টির জলে, নিজেকে বলে মনে মনে -

এ দুনিয়াই যা দেখা যায়, সেটাই শেষ কথা নয়
বিধাতা রাখে প্রতিক্ষণ সব সৃষ্টিকে স্মরণ, থাক নির্ভয়।
জেন সবে বিধাতার এ ভবে, সবই সম্ভব সবই সহজ
বিশ্বাস মিলাবে সবি, বিশ্বাসে থাক ভবী, বিশ্বাসই কবজ।

যে যা চায়, সে তা নিশ্চিত পায় এ ধরায়
যদি নামে রাস্তায়, এর নেই কোন ব্যত্যয়
রাস্তাই রাস্তা দেখায়, নিশ্চিত গন্তব্যে পৌঁছায়।