Heading
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৭
অনিরুদ্ধর খোজে আযুর্বেদ বাগানে ঢুকলো লাবনী।
বেশ কয়েকজন কাজ করছে।
আজ ও যেন মরিয়া। ভাবলো অনিরূদ্ধকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবে ওর এ ধরণের অযাচিত অসৌজন্যতার হেতু কি?
বাগানের মধ্যে ঘুরলো কিছুক্ষন, খুজলো ওকে।
আযুর্বেদ গাছ সম্পর্কে কোন জ্ঞানই নেই লাবনীর। কিন্তু তবুও ভালো লাগলো বাগানটা।
-ম্যাডাম, এইমাত্র অনিরূদ্ধ স্যার একটু বেরিয়ে গিয়েছেন তাড়াহুড়া করে। সে কথাটা বলার জন্য আমি যাচ্ছিলাম আপনার ওখানে।
হাতে পায়ে মাটি মাখা মাঝবয়সী একটা লোক। এ বাগানের কোথাও কাজ করছিলো বোঝা গেল।
একটু হলেও ভালো লাগলো ডাঃ লাবনীর। এই ভেবে যে অনিরূদ্বর তাহলে মনে আছে ওর কথা।
-তা কোথায় গিয়েছে তোমার স্যার?
কন্ঠে কিছুটা তাচ্ছিল্লের সুর।
-এই মাত্র রামদয়াল বাবুর সাথে কোন গ্রামে গেল রোগী দেখতে। বলল খুব খারাপ নাকি রোগীর অবস্থা।
কিছু বিলার আগে একটু ভেবে নিল লাবনী।
-আর, এখানকার রোগী? এখানে রোগী দেখার সময়তো তার শেষ হয়নি।
ডাঃ লাবনী ভাল করেই জানে যে আয়ুর্বেদ বাগানের মালিকে কথাটা বলা নিতান্তই বাতুলতা মাত্র।
-কম্পাউন্ডার স্যারকে বলতে বলেছেন, যে বেশী খারাপ রোগীরা যেন মল্লিক পাড়াতে যায়। ওখানেই ওদেরকে দেখে দেবেন তিনি। গাছগাছড়া আর অসুদপত্র রামদয়ালবাবু সাথে নিয়েছে।
লোকটা কথাগুলো বলে দাড়ালো না আর, হাসপাতালের দিকে হন হন করে হেটে চলে গেল। বোধহয় কম্পাউন্ডারকে সে কথা জানানোর জন্য।
অনিরূদ্ধর ভিতর এই পরিবর্তনটা কিছু দিন থেকেই চোখে পড়ছে লাবনীর। কিন্তু ও ভেবেছিল এটা ক্ষনেকের খেয়াল।
রুগী দেখার জন্য গ্রামে গ্রামে যাওয়ার এই প্রবনতা অনিরূদ্ধর মত বিদেশে মানুষ হওয়া আর পাশ করা একজন ডাক্তারকে এ ভাবে আকর্ষণ করবে আর সে এমনভাবে গ্রাম আর আযুর্বেদ চিকিৎসার প্রেমে পড়ে যাবে, এ যে চিন্তার অতীত!
কিন্তু তা নিয়ে লুকোচুরীর কি আছে! লাবনীকে বলে গেলে কি ক্ষতি হতো তার?
কথাটা ভেবে লাবনীর মধ্যে ভীষণ অস্বস্থি ভাব হল।
অনিরূদ্ধ কি ওকে এড়িয়ে চলতে চায়! কিন্তু কেন? এড়িয়ে চলার কি কোন কারণ আছে! লাবনীর মধ্যে এমন কি অসামঁজস্যতা আছে যার জন্য অনিরূদ্ধ ওকে এড়িয়ে চলবে?
-জানতেই হবে ব্যপারটা।
ভাবল লাবনী।
আয়ুর্বেদ বাগান থেকে হেটে সোজা অমর চৌধুরীর চেম্বারে গেল লাবনী।
কিছু লোকজনের সাথে কথা বলছিলো অমর।
লাবনী এ সময়ে ওর অফিসে আসতে দেখে কিছুটা অবাক হলো অমর।
অমরকে ব্যস্ত দেখে ফিরে যাচ্ছিলো লাবনী।
আলাপ থামিয়ে ব্যস্ত ভাবে বেরিয়ে আসলো অমর।
-ডাঃ লাবনী, কিছু বলবেন?
কি একটা ভেবে নিল লাবনী।
-মল্লিক পাড়াতে বোধহয় খারাপ কোন রোগী আছে, জানেন কি আপনি? অনিরূদ্ধ রামদয়ালকে নিয়ে ওখানেই গেছে।
কথাটা বলে একটু থামলো লাবনী।
অনিরূদ্ধ রামদয়ালকে নিয়ে এভাবে গ্রামে রোগি দেখতে যায় সেটা জানা অমরের। কিন্তু সে ব্যাপারে ডাঃ লাবনী কি বলতে চায় সেটা পরিষ্কার নয়।
কোন উত্তর না দিয়ে অমর তাকিয়ে দেখতে লাগল ডাঃ লাবনীকে।
-মনে হচ্ছে আমারও একটু যাওয়া দরকার ওখানে। যাওয়ার কি কোন ব্যবস্থা করা যায়?
সেখানে যাওয়ার জন্য ডাঃ তাড়া আঁচ করতে চেষ্টা করল অমর।
কি যেন একটু ভেবে নিল অমর।
-ঠিক আছে, এটা কোন সমস্যায় নয়। আমি ঘোড়া গাড়ীকে বলে দিচ্ছি আর সাথে কাজের আয়াকেও দিয়ে দিচ্ছি ও চিনবে সে গ্রাম।
অল্প সময়ের মধ্যেই সব ব্যবস্থা হয়ে গেল। আয়াকে সাথে নিয়ে ডাঃ লাবনী ঘোড়া গাড়ী করে রওয়ানা দিল অনিরূদ্ধর খোজে।
অনিরুদ্ধর আচরনে আজ যেন একদম মরিয়া হয়ে উঠেছে লাবনী। ওর ব্যক্তিত্ব, ওর সৌন্দর্য্য বা অন্যান্য যোগ্যতার বিচারে অনিরুদ্ধর কাছে কোন ভাবেই সে অবহেলার পাত্র নয়। অনিরূদ্ধর এহেন অবহেলা ওর প্রাপ্য নয়।
ডাঃ লাবনী সাথে কোন ডাক্তারী সরঞ্জাম বা ঔষধপত্র নিল না।
কিছুটা অবাক হয়ে দাড়িয়ে তাকিয়ে সে সব দেখলো অমর।
জমিদারের ঘোড়া গাড়ী গ্রামের অন্য প্রান্তে এসেছে। গাড়ীতে মহিলা ডাঃ আছে, তিনি ডাঃ অনিরুদ্ধকে খুজছেন। এক গ্রাম বাসীর মাধ্যমে খবরটা অনিরূদ্ধর কানে আসলে সে যার পর নেই অবাক হলো। অবাক হলো রামদয়ালও।
লাবনী অনিরূদ্ধকে খুজবে তা ওরা জানে, সে জন্যই মালিকে বলে এসেছিল কথাটা ডাঃ লাবনীকে জানাতে।
কিন্তু সে যে খুজতে এখানে চলে আসবে তা যেন ওদের স্বপ্নেরও অতীত।
ওরা তাকালো একে অপরের দিকে।
কি করবে ওরা এখন সেটাই যেন ওদের প্রশ্ন একে অপরের কাছে।
অনিরূদ্ধ অনেকটা জীবন থেকে পালিয়ে বাচার জন্যই এখানে এসেছিল। ওর নিজের সব কিছু ভুলে এখানকার একজন হয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য রামদয়ালের সাথে সর্বোতভাবে যোগ দিয়েছে অনিরূদ্ধ।
এটা যে ওর আবিষ্কৃত আপন ভূবন। অনিরূদ্ধর এতদিনের চেনা জানা ভূবনে ওর আর স্থান নেই। এখন এ ভূবনটাও ছাড়তে হলে, যাবে কোথায় ও!
ওরা তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দোগী হতেই ঘোড়া গাড়ীর আওয়াজ শোনা গেল।
আরতো কোন উপায় নেই।
ভাবল ওরা।
-অনিরূদ্ধ আমাকে না জানিয়ে এভাবে চলে এলে যে?
গাড়ী থেকে নামতে নামতে সরাসরি প্রশ্ন করলো লাবনী। মরিয়া কণ্ঠে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে লাবনী তাকালো অনিরূদ্ধর চোখে সরাসরি।
আকুতীভরা সে চাহনী।
কি বলবে অনিরূদ্ধ!
-তোমার কাজে মানে তোমাদের সাথে আমাকে নাও না কেন অনিরূদ্ধ? আমি কি তার যোগ্য নই?
কি জবাব দেবে অনিরূদ্ধ। লাবনী যে এ মুহুর্তে ওর কাঙ্খিত জবাব ছাড়া অন্য কোন জবাব শুনতে প্রস্তুত নয়। কারণ অনিরূদ্ধ জানে যে ওর চাওয়াটা আন্তরিক আর যুক্তিযুক্ত। একটুও ফাক নেই তার কোথাও।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। একটুও যেন বাতাস বইছে না। একটা গাছের পাতাও নড়ছে না।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে একটা নিশ্বাস নিল অনিরূদ্ধ। তাকালো রামদয়ালের দিকে। অসহায় সে চাহনী।
তারপর লাবনীর চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললোঃ
-চল ফেরা যাক।