জীবন থেকে নেয়া কাহিনী অবলম্বনে রচিত ধারাবাহিক উপন্যাস 'অমৃতের সন্ধানে' ১০ম পর্ব

আপডেট: ১৪ Jun ২০২২, ১৫:২৪

                                                                        অমৃতের সন্ধানে-১০ 

 

বাবা মা আর শিউলি মিলেই ওদের সংসার। বাবার সাথে সম্পর্কটা চিরকালীন আনুষ্ঠানিক। মায়ের সাথেই শিউলি তার সব কথা শেয়ার করত। সেটাও মেডিক্যাল কলেজে পড়ার জন্য হোষ্টেলে যাওয়ার পর থেকে কমতে থাকে। তারপরতো অকালেই তিনি চলে গেলেন। আর বাবা চিরকালই রাশভারী নিজের জগতেই ওর বিচরণ।
তাই আদর করে আধিকার নিয়ে কথা বলবার মানুষের অভাব চিরকাল ও বোধ করেছে।
- আমার মতে গ্রামে যে কয় দিন থাকবেন এদের মত হয়ে থাকুন না। আপনার মত একজন সুন্দরীকে এরা নিজেদের একজন রূপে দেখতে পেলে, মানুষের বেশে অপ্সরী ভেবে আপনাকে নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে যাবে। আপনার হাতে অজস্র সময়, আপনার মত আমি ডাক্তার হলে প্রতিদিন সময় দিয়ে গ্রামের রূগীদের চিকিৎসা করতাম।
শিউলি অবাক হয়ে কথা গুলো শুনতে লাগলো।
-শুরূতেই জীবন যাকে বঞ্চিত করেছে কিন্তু বাস্তবতা ওকে দুহাত ভরে শিখিয়েছে। ভাবলো শিউলি।
এতটুকু বয়সেই মনুষত্বের মাপকাঠিতে যে উচ্চতায় ও উঠেছে তাতে করে এই মুহুর্তে মানিকের সাথে শিউলির বয়সের পার্থক্যটা ঘুচিয়ে মানিক আরো উঁচুতে স্থান করে নিল বলে শিউলির কাছে অনুভূত হতে লাগলো।
-এ ব্যপারে বেলাল সাহেব সাথি হিসাবে আপনার বিশেষ সহায়ক হবে।
মানিকের মন্তব্যে শিউলি মুখটা উঠিয়ে তাকালো, বললো না কিছুই।
বেলালের প্রসঙ্গটা আলাপে আসতেই মানিক যেন একটু অন্যমনষ্ক হয়ে গেল। হটাৎ করেই একটু নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।
রাঙাদাদি মানিক সম্পর্কে শিউলির সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এভাবেই কথা বলতেন। এমনটিই বোধহয় হয়, এটাই বোধহয় নিয়ম। বেরূবার পথ না পেয়ে জমতে থাকা স্রোতের ধারা হটাৎ রাস্তা পেলে যেমন একের আগে অন্যে বের হওয়ার জন্য অধৌর্য্য হয়ে ওঠে তেমনি ভাবেই মানিক সন্মদ্ধে জমে থাকা শত সহস্র কথা শিউলির মত একজন মমতাময়ী শ্রোতার কাছে বলে রোকেয়া বেগমও যেন নিজেকে হালকা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
একবার মানিক ওর নানীর পাশে বসে বৃষ্টি দেখছিলো। ঝড় বৃষ্টির মধ্যে একটা পাখীর ছোট্ট বাচ্চা ছিটকে রোকেয়া বেগমের ঘরের ঠিক সামনে এসে আছড়ে পড়লো।
মানিক ব্যস্ত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে নেমে পাখীর বাচ্চাটাকে তুলে আনলো। তারপর ওকে নানাভাবে সেবা যত্ন করে ভালো করে তুললো। মানিক সেবার ছুটিতে এসে প্রায় এক মাস ছিল ওর নানীর সাথে। ও চলে যাওয়ার সময় পাখীটা ছেড়ে দিয়ে গেল।
পাখীটা ছেড়ে দিয়ে ও নানীর বুকে মুখটা গুজে বলেছিলো- পাখীদের মধ্যে মান বিচার নেই, একি জাতের সবাই সবাইকে একই রকম ভাবে ভালো বাসে, তায় একটা সাথী খুজে পেতে মোটেও কষ্ট হবে না পাখীটার। যার সাথে ও প্রাণ খুলে মনের কথা বলবে। হয়তো তোমার কথা আমার কথাও।
তারপর একটা চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেছিলো- নিজেকে বোঝার মত একজন মানুষ পাওয়া দায়।
তারপর মুচকি হাসতে হাসতে নানীকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো- আমার তুমি হলেই চলবে, তুমিই আমার পাখী।
ঘটনাটা বলতে বলতে কিছুটা অন্য মনস্ক হয়ে রাঙাদাদি বলেছিলেন- জানিস শিউলি মানিক যে কি চায় মাঝে মাঝে সত্যিই তা আমি বুঝতে পারি না।
সেদিন রাঙাদাদি দারূনভাবে ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন।
শিউলিকে জড়িয়ে ধরে বললেন- মানিককে রেখে আমি মরতে পারবো না। আমার মৃত্যুকে সহ্য করার মত সাহস ওর নেই। আমি মরার সময় ওকে যেন কেউ খবর না দেয়। কথাগুলো বলতে বলতে ঐ অশীতিপর বৃদ্ধা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন।

চাঁদটা মাথার উপর উঠে এসেছে। চারিদিকে দুধে ধোয়ার মত অবস্থা।
জোৎস্নার একটা বিশেষত্ব আছে- এটা কঠোর বাস্তবতাকেও স্বপ্নিল করে তোলে।
এই মুহুর্তে শিউলির মুখের উপর ভেষে উঠা অভিব্যক্তিটা যদি মানিক দেখতে পেত তবে হয়তো ঘটনার মোড় অন্য দিকে যেত।
শিউলি বরাবরই শহরে মানুষ। বড় ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র কন্যা হওয়ার সুবাদে বাড়ী গাড়ী স্কুল কলেজ আর প্রাইভেট টিউটরের বাইরে অন্য জগতের সাথে পরিচিতি খুবই কম। না চাইতেই জীবন ওকে সব কিছুই দিয়েছে।
জীবন ওকে প্রথম ধাক্কাটা দিল অকালে ওর মাকে কেড়ে নিয়ে। হটাৎ করে এক সপ্তাহের অসুস্থতায় ওর মা মারা যাওয়ার পর ওর জীবনের সব হিসাবই উল্টাপাল্টা হয়ে গেল। এত দিনের পরিচিত পৃথিবীটা অপরিচিত হয়ে গেল। ওর সব স্বপ্নই তাসের ঘরের মত যেন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।
জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা আলো ঝলমলে পৃথিবীটার রং ফিকে হয়ে গেল। কারের জানালা দিয়ে দেখা মসৃন পিচ ঢালা পথগুলো হটাৎ করেই ওর সামনে এসে গতি রোধ করে দাড়ালো। জীবনটা স্থবির হয়ে গেল।
সবাই আসলো সহানুভূতি জানাতে। এমনি এক সময়ে আসলো বেলাল। ওর মামার ছেলে, ডাক্তার, লন্ডনে থাকে। অনেক শান্তনা দিল। দুনিয়ার বাস্তবতা ওর সামনে তুলে ধরে ওকে জীবনটা স্বাভাবিক করতে সহায়তা করলো। বেলাল ওর কষ্টটাকে ভাগাভাগি করে সেটা হালকা করলো।
আপন আত্মীয় যারা ছিলেন সবাই আড়ালে আবডালে বেলালের মহানুভবতাকে প্রশংসা করলো।
-বেলালের মত ছেলেই হয় না। এমন দূর্দিনে পরম বন্ধুর মত হাতটা বাড়িয়ে যে পাশে এসে দাড়ায় সেইতো প্রকৃত বন্ধু। সবাই মন্তব্য করল।
এ পরিস্থিতিতে মা মরার শোকে মুহ্যমান একটা মেয়ের দিকে বেলালের মত একটা যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলে যেভাবে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিল তাতে ও যে একটা অতুলনীয় ছেলে তাতে কারো সন্দেহ থাকলো না।
বেলাল ছুটিতে দেশে ছিল তখন। সব সময় যাতায়াত করতো শিউলির ওখানে। অনেক সময় দিত শিউলিকে। ওকে নিয়ে মাঝে মধ্যে বেড়াতে বের হতো যাতে মনটা ভালো হয়।
সব মুরব্বীরা বাবাকে পরামর্শ দিলেন শিউলিকে বেলালের হাতে তুলে দিতে।
ওকে নিয়ে এবং ওর জন্যই এত বড় একটা সিদ্ধান্ত! সব কিছুই জানে শিউলি, কিন্তু বিষয়টা এমন একটা ব্যপারকে ঘিরে যে, সেটা আলোচনার জন্য একটা বিশেষ ধরনের সম্পর্কের মানুষ লাগে যেমন রড় বোন, ভাই বা চাচা বা অন্য কোন আপনজন যার সাথে খোলামেলা আলাপ করা যায়। শিউলির তেমন কেউ ছিল না। বাবার সাথে সম্পর্কটা চিরকালই আনুষ্ঠানিক। মা থাকলে হয়তো বা আলোচনা করা সম্ভব হতো।
তায় ব্যপারটা কেউ ওকে সেভাবে জিজ্ঞেস করেনি। ঘটনার এহেন অগ্রগতিতে বলতে গেলে শিউলির কোন ভূমিকায় থাকলো না।
কিন্তু বাবা কোন কিছুই ইচ্ছাকৃতভাবে ওর কাছ থেকে গোপন করেননি। সবই জানতো শিউলি, সবার মন্তব্যও শুনতো।
বিষয়গুলো নিয়ে শিউলি ভেবেছেও গভীরভাবে নিজের মনে। কিন্তু ভাবনাটা ওর নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেল, এটা যে ওর জীবনের জন্য বিশেষ একটা দরকারী ভাবনা এমন অনুভূতি কখনো আসেনি ওর মধ্যে।
এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যেমন ও হয়তো দেখেছে অন্য দশটা বাংগালী মেয়ের হিসাবে বিয়ের বয়সতো ওর হয়েছেই। আর বেলালের সাথে ওর প্রফেশানেরও মিল আছে, সাধারণতঃ ডাক্তার মেয়েদের ডাক্তার স্বামী হবে এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তদুপরি এদেশের নয় একেবারে বিলেতের ডাক্তার, তাই এই সম্পর্কের ব্যাপারে বাবা সহ অন্যান্য সব আপনজনরাই খুশী।
সব মিলে শিউলি একটু হতবুদ্ধিই হয়ে গিয়েছিল।
মানুষ জন্মগতভাবেই তার সব পাওয়া নিজের অর্জনের ফল হিসাবে দেখতেই বোধহয় পছন্দ করে, সে অর্জনটা সহজ বা কঠিন যাই হোক না কেন। কিন্তু অর্জনটা যদি লটারীর টিকেট জেতার মত হয় আর প্রপ্তির পরিমানটা যদি আশাতীত হয় তাহলে যে কারো পক্ষেই হতচকিত হওয়ার কথা। সর্বপরী ঐ টিকেটটাও যদি তার নামে অন্য কোন আপনজন কিনে থাকে তাহলেতো বাকরোধ হওয়ারই কথা।
শিউলির ব্যপারটা কিছুটা সেরকম। কিন্তু ওতো কারো লটারিতে জেতা কোন সামগ্রী নয়, যেমন কাঁচা টাকা বা কোন মনি মুক্তা, যা ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করা যায়। বিষয়টা রক্তমাংসের গড়া মানুষকে নিয়ে, মানুষ কোন বস্তু নয়, মানুষের মন মান অভিমান রাগ দুঃখ বেদনা পছন্দ অপছন্দ আরো কত কিছুর সমাহার।
ওর মৌনতাকে সন্মতি ধরে নিয়ে সবার সাথে বাবাও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলেন।
শিউলিও নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলো যে ওর মত একজন মেয়ের পাত্র হিসাবে বেলাল কোন দিক থেকে কম না।
শিউলি তখন মেডিক্যাল ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করেছে। প্রস্তাব হলো তখনই বিয়ে হয়ে যাওয়ার। কিন্তু একদিকে মায়ের মৃত্যুর শোকটা তখনো কাটেনি অন্যদিকে শিউলির ইনটার্নশীপ শুরূ হবে। এসব বিবেচনায় বিয়ের পরিবর্তে এনগেজমেণ্টের কথা আসলো।
কিন্তু নিজেদের মধ্যে এনগেজমেণ্টের কি দরকার, এ ধরনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো বছর খানেক পর শিউলির ইনটার্নশীপ শেষ হলে বেলাল লন্ডন থেকে আসবে। তারপর ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হবে এবং শিউলি বেলালের সাথে লন্ডন চলে যাবে।
নানা জনের নানা মত নানা মন্তব্য। আর সর্বপরি এমন একটা পরিস্থিতিতে মা মরা মেয়ের এত সুন্দর একটা বিয়ের ব্যবস্থা হওয়াই বাবার স্বস্তিতে সত্যি বলতে শিউলি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল। ও কোন কিছু নিয়েই কোন মন্তব্য করলো না।
বেলাল চলে গেল তাড়াতাড়ি ফিরে এসে ওকে নিয়ে যাবে বলে।
যাওয়ার সময় অনেক শান্তনা এবং অভয় দিয়ে গেল। যেন ওরা কেউ ওর আন্তরিকতা নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা না করে, বিশেষ করে শিউলি। বেলাল টেলিফোনে সার্বক্ষনিক খোজখবর রাখবে জানালো। আর শিউলির ইনটার্নশীপ শেষ হওয়ার পর পরই দেশে আসবে বলে বেলাল সবাইকে আশ্বস্ত করলো। যাওয়ার সময় সবাই আসলো বেলালকে বিদায় দিতে। সবাই ওকে কৃতজ্ঞতার সাথে বিদায় জানানোর সময় বেলালের চোখে মুখে একটা আত্মতুষ্টিতে ভরে আত্মবিশ্বাসের ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠলো।
প্রস্থান কালে বেলাল হাত নেড়ে, সবার বুকে বুক লাগিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করে শিউলির দিকে তাকিয়ে বললো- চিন্তা করো না, সময় দেখতে দেখতে কেটে যাবে, ইনটার্নশীপটা মন দিয়ে করো, ভবিষ্যৎ পেশাতে কাজে লাগবে। টেলিফোন করলে ঠিক মতো ধরো।
সংক্ষিপ্ত সুন্দর উপদেশ। সবাই খুশি হলো।
হাসি ভরা বেলালের মুখটা। তাতে না আছে কোন আকাঙ্ক্ষা না আছে ভাবাবেগের কোন অতিশয্য।
অর্জনের কোন প্রয়াস ছিল না বেলালের তায় বোধহয় খোয়ানোর কোন অনিশ্চয়তা নেই।
উপস্থিত সবাই স্বস্থি সহকারে নিশ্বাস ফেললো।
বেলাল লন্ডন চলে গেল। বাবা সহ অন্যান্য সবাই বেলালের ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগলো।
বেলালের চলে যাওয়াটা এবং ওর বড় মনের পরিচয়টা সবার উপর রেখাপাত করলো। করলোনা কেবল শিউলির উপর।
যাওয়ার সময়কার বেলালের ঐ বিজয়ের হাসিভরা মুখটা শিউলির মানসপটে আঁকা হয়ে থাকলো।
-কি ছিল তাতে। মহানুভবতার জন্য আত্মতুষ্টি!
বিদায় দিতে আসা অনেকের সরাসরি প্রশংসায় ওর মুখটা আরো আত্মতৃপ্তিতে উজ্জল হয়ে উঠছিল। কিন্তু প্রকৃত মহানুভবতাতো কোন স্বীকৃতির অপেক্ষা করে না।
-আর এখানে মহানুভবতারই বা কি আছে। বাবা মা বা অন্যান্যদের কাছে পরিস্থিতির কারণে হয়তো ব্যপারটা মহানুভবতা মনে হতে পারে, কিন্তু দুটি জীবনের এই স্বর্গীয় বন্ধন কি মহানুভবতার উপর ভিত্তি করে চলতে পারে। সোনা দিয়ে গড়া কারূকার্য্যখচিত পাত্রে জীবন্ত চির সবুজ বৃক্ষকে রাজপ্রাসাদে স্থান দিয়ে শোভাবর্ধন করা যেতে পারে। কিন্তু তাতে যদি নিয়মিত পানি না দেয়া হয়, প্রতিদিন সুর্যালোক না লাগানো হয় তাহলে সেটা শুকিয়ে নীরবে সবার অগোচরে একদিন শেষ হয়ে যায়।
যাবার পূর্ব মূহ্নর্তে বেলালের দেয়া উপদেশগুলোর যে কোন বিচারের মাপকাঠিতে খারাপ বা অপ্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু কথাগুলো বড় বড় চোখ করা স্কুলের হেডমাষ্টারের নির্দেশের মন শিউলির কানে বাজতে লাগলো।
এরপর ঘটনার দ্রুত অগ্রগতি, দিন মাস গড়িয়ে একটা বছর কেটে গেল। শিউলি ভাল ভাবে ইনটার্নশীপ শেষ করলো।
বেলালের উপদেশের ভিত্তিতে না হলেও রোগীদের প্রতি মমত্ববোধ ওকে সবসময় অনুপ্রেরনা যোগাতো। শিউলির মা মারা যাওয়ার পর অসহায় রোগীদের সেবাদানের মধ্যে ও অন্য রকম একটা প্রশান্তি খুজে পেত।
কিন্তু শিউলি কখনো বেলালের চাহিদা মিটাতে ত্রুটি করেনি। সব সময় টেলিফোনে ওর যাবতীয় কাজের হিসাব দিয়েছে। ধৌর্য্য ধরে লন্ডনের সাহেবদের বিভিন্ন বোকামির গল্পে বেলালের উল্লাসে সে সাধ্যমত অংশগ্রহন করছে।
বেলালের সাথে ওর টেলিফোনে কথাবার্ত্তার ব্যপারে বাবার প্রশ্নের জবাব দিতে ওর কখনই কোন সমস্যা হয়নি। কারণ বেলালের সাথে কথাবার্তার কোন অংশের এতটুকুও লুকাতে হয়নি বা বানিয়ে বলারও কোন প্রয়োজন পড়েনি কোনদিন।