Heading
আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৫৭
পুব পশ্চিম আর দক্ষিনে উঁচু উঁচু সব বিশাল বিশাল অট্টালিকার সারিতে ঘেরা একটা জলাভূমির দুধার ঘেসে দিনে দিনে গজে উঠেছে বস্তিটা। এক সময় এলাকার পুরোটাই জলাভুমি ছিল, বর্তমানে তা শুখিয়ে মাঝখানের জায়গাটাতে পানি আটকে থাকে আর দুধার কাদা প্যাঁচ প্যেচে। কালে কালে সেখানেই ভাসমান মানুষেরা বস্তি তৈরী করেছে।
ওই জলাভূমি যেমন শহরের সব পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি নিষ্কাসনে সহায়তা করে তেমনি ভাবে বস্তির সব মানুষ শহরবাসীদের শুখ শান্তির জন্য প্রয়োজনীয় সস্তা লোকবলের জোগান দেয়।
বস্তিটাকে তিন ধার ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা অট্টালিকাগুলো থেকে বস্তিটা দৃষ্টি কটু দেখালেও সর্বচিন্তায় তা মেনে নিয়ে বসবাস করছে ফ্লাট বাসিন্দারা। অট্টালিকাবাসী তাদের সব পয়নিস্কাসন, ধোয়া উদ্গিরন জাতীয় ব্যবস্থা সমুহ বস্তির দিকে মুখ করে তৈরী করেছে। তাছাড়া সব সময়ই বস্তির দিকের জানালা গুলো বন্ধ করেই কাজ চালিয়ে নেয়।
সর্ব বিবেচনায় বস্তিদৃশ্য বাড়ী গুলোর মূল্য স্বভাবতই কম।
উঁচু উঁচু সব অট্টালিকা গুলো সকাল বিকেলের রোদ যেমন বস্তির উপর পড়তে বাধা দেয় তেমনি দখিণা বাতাসকেও বাধা দেয়। কিন্তু তাতে বস্তি বাসীদের তেমন অসুবিধা হয় না। কারণ শীত হোক বা গরম সারাদিনের খাটাখাটনির পর কোন কিছুই ওদের রাতের ঘুম আটকে রাখতে পারে না।
তাছাড়া বস্তির ঘরে যে বিদ্যুতের বাতি বা পাখা চলে সেগুলো ওই উঁচু উঁচু অট্টালিকার বদান্যতায় বলা যায়। কারণ সরকারী জায়গা বেদখল করে ঘর বাড়ী বানানো পুরো বস্তিই অবৈধ, তাই এখানে কোন সরকারী ইউটিলিটি সার্ভিস কাজ করে না। বিদ্যুতের লাইনগুলো সব অবৈধ ভাবে ওই সব অট্টালিকা থেকে চুরি করে নেয়া।
শহরের নিন্ম আয়ের মানুষেরা বস্তির সাথে লাগোয়া ফ্লাটগুলো কম মূল্যে ভাড়া নিয়ে বসবাস করে থাকে।
এ বাসাগুলোতে বসবাসের কিছু সুবিধাও আছে। বস্তির সাথে লাগোয়া বাসাবাড়ীতে বিভিন্ন কাজের ব্যাপারে দূরত্বের স্বল্পতা বিবেচনায় বস্তিবাসীরা বেশী আগ্রহ দেখায় আর পারিশ্রমিকও কম নেয়।
আর্থিক সামর্থ্যতা, শিক্ষা দীক্ষা আর মন মানসিকতায় বিস্তর বৈষম্যে ভরা দুটো জনগোষ্ঠী একে অপরের সহযোগিতা নিয়ে পাশা পাশি বসবাস করলেও তাদের মধ্যে এক ধরণের শ্রেণীগত অবিশ্বাস আর অপছন্দ বিরাজমান। দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে মিথোজীবীতার সম্পর্ক থাকলেও পারস্পারিক অবিশ্বাস আর অপছন্দের বিষয়টি ওদের মধ্যে মজ্জাগত।
অট্টালিকাবাসীরা মনে করে বস্তিবাসীরা নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত আর সব ব্যাপারেই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। অন্য দিকে বস্তিবাসীরা মনে করে যে, অট্টালিকাবাসী শিক্ষিত মানুষেরা সব সময় বস্তিবাসীদের নিচু চোখে দেখে আর বুদ্ধি ও ক্ষমতার বলে তাদেরকে সব সময় বঞ্চিত করে।
এ ভাবে অন্যোন্যজীবী দুটি সমাজ একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস ও ঘৃণার সম্পর্ক নিয়ে পাশাপাশি বসবাস করে।
বস্তিবাসী বিশ বছর বয়সী ছেলে অমল। সে ঠেলাই করে বিভিন্ন সামগ্রী ওই উঁচু তলার বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করে জীবন চালাই। ওর সামগ্রীর কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীবিভাগ নেই। বিভিন্ন সময়ে বস্তিতে জন্মানো বিভিন্ন শাক সব্জি, মাছ ডিম মুরগী, বিভিন্ন জাতীয় খেলনা বা সাবান শ্যাম্পু ইত্যাদি ও ঠেলাই করে বিক্রি করে।
অমলের ফেরি করা দ্রব্য সামগ্রীর বিশেষ চাহিদা আছে। প্রথমত দামে অনেক সস্তা, তার উপর খাদ্য সামগ্রী সব বস্তির বিভিন্ন মানুষের ছোট ছোট আঙ্গিনায় উৎপাদিত। ওদের নিজেদেরও যেমন পুষ্টিকর খাবার ক্রয়ের সামর্থ্য নেই তেমনি শাক সব্জির ক্ষেতেও ফলন বাড়তে কোন সার বা কীটনাশক প্রয়োগেরও সামর্থ্য ওদের নেই। যার সেগুলো পুরোটাই অরগানিক।
কয়েক দিন ধরেই আকাশটা মেঘলা। সেদিন সকাল গড়াতেই বৃষ্টি, ফিস ফিস করে শ্রাবণের ধারা ঝরেই চলেছে। যাকে বলে ইলশেগুঁড়ি। অমল একবার ভেবেছিল আজ ঠেলা নিয়ে বেরুবে না। কিন্তু ভোরে উঠে বৃষ্টি শুরুর আগেই শাক সবজি গুলো কেটে ছেটে ঠেলাই তুলে ফেলাই অনেকটা অনন্যোপায় হয়ে পলেথিনে গা মাথা পেচিয়ে ঠেলা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অমল। ভাবল হাউজিং এর কোন একটা খালি গ্যরেজের নিচে ঠেলাটা রেখে মালামাল গুলো বিক্রি করেই ফিরে আসবে।
বিল্ডিং গুলোর মাঝামাঝি একটা টিনের ছাউনি দেয়া খোলা গ্যারেজে খালি একটা জায়গা পেয়ে সেখানেই ঠেলাটা রাখল অমল।
বৃষ্টি না থাকলে রাস্তার ধার ঘেঁষে কোন গাছের ছায়াই ঠেলাটা সেট করে অমল। চার ধারের বিল্ডিং থেকে কারো নজরে পড়ে দুএকজন করে খরিদ্দার আসলেই পুরো মহল্লাই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। আর সব সামগ্রী কয়েক ঘন্টায় বেচা হয়ে যায়। এ ছাড়া মহল্লাবাসী তাদের বাসার ছোট খাট ইলেক্ট্রক, পানি বা গ্যাসের লাইনে কোন সমস্যা থাকলে অমলকে বাসা ও ফ্লাট নম্বর দিয়ে চলে যায়।
এ কাজ গুলোর ব্যাপারে অমলের হাত ভাল। বেচা বিক্রি শেষ হলে কাজ গুলো করার জন্য অমল সে সমস্ত বিল্ডিঙে যায়। ছোট খাট সমস্যাগুলো ও নিজে ঠিক করে দেয় আর বড় কিছু থাকলে ওই বাসাই দাঁড়িয়ে টেলিফোনের মাধ্যমে মিস্ত্রি ঠিক করে দেয়।
নিজের কাজের জন্য ও কোন মজুরী দাবি করে না। যে যা দেয়, হাসি মুখে ও তা গ্রহন করে।
এখনকার বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য হাউজিং পরিষদের সভাপতি ওকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছে যাতে মহল্লাবাসী অমলকে সময়ে অসময়ে কল করে নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে পারে। অমলের পুরনো একটা সাধারণ মোবাইল ফোন ছিল যেটা দিয়ে ওর কাজ চলে যেত। কিন্তু তাতে নেট ব্যবহার করা যায় না বা চার্জ থাকে না, সে জন্যই মহল্লাবাসীর প্রয়োজনেই পরিষদের সভাপতি ফোনটা ওকে কিনে দিয়েছে।
অমলের কাছে স্মার্ট ফোন থাকলে আর একটা বাড়তি যে সুবিধা সেটা হল মহল্লাবাসি নেট অন করে ভিডিও কলে বাসার সমস্যাগুলো ওকে দেখিয়ে বলতে পারে। সর্বোপরি নাম মাত্র খরচে অমলকে কল করে লম্বা সময় নিয়ে কথাও বলতে পারে।
এ রকম একটা দামি স্মার্ট ফোন অমলের দরকার না। তবে দামী সুদৃশ্য ফোনটা পেয়ে অমলের যে ভাল লাগেনি সেটা বলা যাবে না। তাই ফোনটা নিতে ও তেমন অমত করেনি।
যেহেতু ফোনটা হাউজিং এর পরিষদ থেকে দেয়া তাতে করে মহল্লাবাসীদের মনে অমলের উপর একটা অতিরিক্ত অধিকার বোধের জন্ম দিয়েছে। কোন সময় যদি কোন কারণে রাত বিরাতে ফোনটা ধরতে অমল দেরী করে তাহলে মহল্লাবাসিদের কেউ কেউ ওকে গালাগালাজ করে।
অন্যদিকে বস্তিবাসীরা তাদের আপনজনেরা যারা দেশ বিদেশের বড় বড় শহরে থাকে তাদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার জন্যও রাত বিরাতে অমলের শরণাপন্ন হয়।
মোটকথা হাউজিং এর বাসিন্দা আর ওর বস্তিবাসী মানুষজন সকলে রাতের বিভিন্ন সময়ে ওর ফোনটা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে।
প্রকৃত অর্থে ওই স্মার্ট ফোনটা অমলের রাতের ঘুমটা কেড়ে নিল। সারাদিন খাটা খাটনির পর বাড়ী ফিরে বিছানায় গাটা এলিয়ে দিলেই অট্টালিকাবাসীরাও ফোন করতে থাকে আর বস্তিবাসীরাও ভিডিও কল করার জন্য ওর বাড়ীতে ভিড় করে।
একজন ফোন করলে অন্যজন ফোনটা বিজি পায় আবার কখনো অমল ঘুমিয়ে পড়লে ফোনটা ধরতে পারে না বা নিজে ক্লান্ত থাকায় অনেক সময় বস্তিবাসী কাউকে ফোনটা ব্যবহার করতে দেয় না, ইত্যাদি কারণে ও কারোরি চাহিদা পুরোপুরি পূরণ না করতে পারায় সবাই অমলের উপর অখুশী। এ নিয়ে অবিরাম ভাবে হাউজিং এর বাসিন্দারা পরিষদে আর বস্তিবাসীরা ওর বাবার কাছে অভিযোগ করে।
সেদিন বৃষ্টিটা যেকেই বসলো, সাথে থেকে থেকে ঝড়ের ঝাপটা। মহল্লার মানুষ সব ঘর বন্দি হয়ে থাকলো। আধা বেলা গড়িয়ে গেলেও শাক সবজি তেমন বিক্রি হল না। অমল বস্তিতে ফিরে যাওয়ার মনস্ত করল। ঠিক তখনি ওরই চোখের সামনে হাউজিং এর রাস্তার পাশে দাঁড়ানো গাছের একটা মোটা ডাল চলন্ত একটা কারের উপর সরাসরি ভেঙ্গে পড়লো।
আশেপাশে কেউই ছিল না। তাড়াতাড়ি ছুটে গেল অমল।
নিজে গাড়ী চালিয়ে বাচ্চাকে স্কুল থেকে ফিরছিল এক মহল্লাবাসী। সামনে স্ত্রী আর পিছনে কাজের বুয়া সহ ওদের দশ বছরের মেয়ে বসে ছিল। ডালটা ভেঙ্গে গাড়ীর পিছনের দিকে ছাদে পড়াই কাজের বুয়া আর মেয়েটা দারুন ভাবে আহত হল। ওরা স্বামী স্ত্রী সামনের সিট থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এসে পিছনের সিট থেকে আহত মেয়েকে বের করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো।
অমল ওদেরকে সাহায্য করে অজ্ঞান দুজনকেই টেনে বের করে আনলো। দুজনেরই মাথা ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে। ওরা স্বামী স্ত্রী বিলাপ করতে লাগলো।
ভদ্রলোক তার সেল ফোনে কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করেও এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে তেমন ফল হল না।
-স্যার, কোন গাড়ি আশে পাশে দেখছি না, আর এ সময়ে কোন গাড়ী পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। আপনি বললে আমার ঠেলাই করে ওনাদের হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা যায়।
স্বামী স্ত্রী দুজনই অমলকে চিনল।
-ঠিক আছে যা করার তাড়াতাড়ি কর।
অমল দৌড়ে গিয়ে ওর ঠেলার উপর যা কিছু ছিল তার সব ফেলে দিয়ে ঠেলাটা নিয়ে আসলো।
ভদ্রলোক তার মেয়েকে কোলে করে ওর অজ্ঞান দেহটা ঠেলার উপর তুলল।
কাজের বুয়ার অজ্ঞান দেহটা পাশে পড়ে।
-স্যার, আমার সাথে একটু হাত লাগালে ওনাকেও ঠেলাই তোলা যাবে।
-তোকে অত ভাবতে হবে না, তাড়াতাড়ি কর।
ভদ্রমহিলা কাঁদতে কাঁদতে অমলকে ধমক দিল।
ভদ্রলোক কি ভেবে অমলকে সাহায্য করে কাজের বুয়ার দেহটাও ঠেলাই উঠালো।
ওরা স্বামী স্ত্রী ঠেলাই পা ঝুলিয়ে উঠে বসতেই অমল ঝড় বাদলের মধ্যেই ওর গায়ের সমস্ত জোর লাগিয়ে ঠেলাটা টানতে শুরু করল।
বৈরী আবহাওয়াই রাস্তা ফাকা ছিল। আধা ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌছালো ওরা।
ভদ্রলোক দৌড়ে হাসপাতালে ঢুকে একটা স্ট্রেচার টেনে এনে তাতে তার মেয়েকে উঠিয়ে ভিতরে চলে গেল। প্রায় আধা ঘন্টা পর হাসপাতালের স্টাফ অন্য একটা স্ট্রেচার নিয়ে আসলো। অমল ধরাধরি করে বুয়াকে স্ট্রেচার তুলে দিল।
স্মার্ট টেলিফোনের দৌরাত্বে রাতে ভাল ঘুম না, তারপর বৃষ্টিতে ভিজে অমলের জ্বর এসে গেল। অগত্যা ও ঠেলাটা টেনে ভিজতে ভিজতে বস্তিতে ফেরত আসতে বেশ রাত হল।
অমলের বাবা ছেলের গায়ে হাত দিয়ে জ্বর দেখে ওর গা মাথা মুছিয়ে দিয়ে খাটে শুয়িয়ে দিল।
কিন্তু জ্বর কিছুতেই কমলো না। ছেলেকে নিয়ে এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কি করবে তা বুঝে উঠতে পারল না।
স্মার্ট সেল ফোনের জন্য ছেলে রাতে ঠিক মত ঘুমাতে পারে না সে কথা বৃদ্ধ জানে। তাই ছেলেকে কতবার বলেছে ফোনটা ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু অমল চেষ্টা করেও ফোনটা ফিরিয়ে দিতে পারিনি।
-দায়িত্ব যখন একবার কাঁধে নিয়েছ তখন সেটা পালন করতেই হবে তোমার। মহল্লাবাসী তোমার সেবা নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, সেবা বন্দ হলে তারা যেমন আমার উপর অসন্তুষ্ট হবে তেমনি তোমাকে আর তোমার বাবাকে এই বস্তিতে বাস করতে দেবে না।
সভাপতি সাহেবকে ফোনটা ফেরত দিতে গেলে তিনি এ কথা বলে অমলকে সাবধান করেছিলেন সে কথা ওর বাবা জানে।
-এই ফ্রি ফ্রি পাওয়া ফোনের জন্য তোমার ছেলে কত বাড়তি ইনকাম করে তা আমরা জানি। এখন এই খোড়া যুক্তি দিয়ে আমাদেরকে নিষেধ করলে আমরা কি বসে থাকবো? আমরা এর বিহিত করেই ছাড়ব।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ওর বাবা অমল ক্লান্ত বা ঘুমাচ্ছে সে কথা বলে বস্তিবাসীদেরকে ফোন ব্যবহার করতে না দেয়াই তারা বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়েছে।
আজ এই দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও কয়েকজন বস্তি বাসি ফোন করতে আসলে অমলের বাবা হাত জোড় করে ছেলের গায়ে খুব জ্বর সে অজ্ঞানের মত পড়ে আছে জানালেও তারা কেউ তা বিশ্বাস না করে উল্টো শাসিয়ে গেল।
অমলের বাবা অসহায়ের মত ছেলের গা মাথা ভেজা গামছা দিয়ে মুছিয়ে দিতে লাগলো।
ওদিকে একটার পর একটা ফোন বেজেই চলল। ফোনগুলো হাউজিং এর বিল্ডিং থেকে আসছে সে কথা বুঝল অমলের বাবা।
জ্বরের প্রকোপে অমল জ্ঞান হারিয়ে নড়াচড়া করা বন্দ করে দিল।
গভীর রাতে আবার ফোনটা বেজে উঠলো। অমলের বাবা ভাবল হাউজিং এর কোন সাহেব নিশ্চয় অমলকে কাজের জন্য খুঁজছে, ফোনটা ধরে অমলের শরীরের কথা জানিয়ে সাহায্যের জন্য বলবে ভেবে ফোনটা ধরল।
-কাজের বুয়া বেচে গেলেও মেয়েটা মারা গিয়েছে। তোর ঠেলাই করে নিয়ে যাওয়ার সময় ঝাঁকুনিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার জন্য মেয়েটা মারা গিয়েছে বলে সবাই বলছে। ওরা থানায় কেস করেছে কাল সকালে পুলিশ তোকে ধরতে আসবে।
কেউ একজন কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিল।
পরদিন সকালে একগাড়ী পুলিশ আসলো বস্তিতে।
অমলের অবহেলার জন্য মেয়েটা মারা গিয়েছে বলে মেয়েটির বাবার অভিযোগ ছাড়াও অমলের বিরুদ্ধে মহল্লা আর বস্তিবাসীর অনেক অভিযোগ সাথে করে নিয়ে এসেছে পুলিশ।
তারা অমলের ছোট্ট আঙ্গিনাটা ঘিরে ফেলল। যাতে সে কোন রকমে যেন পালাতে না পারে।
বাইরে থেকে মেগাফোনে অমল আর ওর বাবাকে পালানোর চেষ্টা না করে বেরিয়ে আসার জন্য হুশিয়ারি উচ্চারণ করতে লাগলো পুলিশ।
কোন রকম সাড়া শব্দ না পেয়ে আঙ্গিনায় প্রবেশ করে খোলা দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকল পুলিশ।
শুন্য ঘর। সব কিছুই পড়ে আছে কিন্তু ওরা কেউ নেই।
টেলিফোনটা রেখেই অমলের বাবা আর দেরী করল না। টেনে হেচড়ে ছেলের নিস্তেজ দেহটা ঠেলাতে উঠিয়ে বৃদ্ধ দেহে যত শক্তি ছিল তা কাজে লাগিয়ে ঠেলাটা টেনে ঝড় জলের ভিতরই বস্তি ত্যাগ করে চলে গেল সে রাতেই।
পুলিশ সেই স্মার্ট ফোনটা জব্দ করল।
-স্যার চার্জ অভাবে ফোনটা ডেড হয়ে গেছে।
পুলিশ কনস্টেবল ফোনটা চেক করে রিপোর্ট দিল।