Heading
আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫১
আছি বসে, বাবার কবর ঘেঁসে হেলান দিয়ে
চোখের জল বাধ ভেঙেছে, চোয়াল দুটো ভিজে গেছে।
ভাবছি কেবল, উষ্ণ সে কোল, খেলত বাবা আমায় নিয়ে।
সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে, আশে পাশে, কাছে দূরে,
বইছে বাতাস মৃদু বেগে, আমি আর বাবা আছি জেগে।
আমার খুব ইচ্ছে করে, বাবা, তোমায় ‘তুমি’ বলি জড়িয়ে ধরে।
এমনি ভাবে পায়নি তোমায় জীবন কালে, কোন ছলে
মাঝে ছিল দেয়াল খানা, ছিল তা ভাংতে মানা কোন বলে।
এই ফাঁকে কি বলব তাকে, ‘বাবা তুমি কেমন আছো’!
দেখিনি তোমায় কত সময়, যখন থেকে চোখ বুজেছো।
এমনি ক্ষনে এই নির্জনে, খুব ইচ্ছে করে মনে মনে
তোমার বুকে মাথা গুঁজে, চোখ দু’খানি একটু বুজে
জূড়ায় আমার মনের জ্বালা, করব নাকো আর ঝামেলা।
বসে আছি গোরস্থানে, বাবার কথাই ভাবছি কেবল মনে মনে
ভরা দুপুর, নিঃশব্দ নিথর, যেন মৃত পুরী!
হটাৎ করে একে একে, পাখীরা সব উঠল ডেকে
বাবা আছে ধারে কাছে, দিল মোরে স্মরণ করি।
গাছের শাখে হুস হুস করে, হাসল বাতাস মৃদু স্বরে,
গাছের পাতা পড়লো ঝরে।
শুখিয়ে দিলে, ঘাম যা ছিল মোর কপালে।
চেনা পাখি উঠলো ডেকে, বৃষ্টি এল আকাশ থেকে
বলল বাবা আমায় ডেকেঃ
কবর ধরে খোকা, কাঁদিস নারে বোকা
এত আমার, কেবল কায়ার আধার, আমি নেই সেখানে আর।
শরীর ছিল আমার সাথে সুখে দুখে, যার জিনিস সে নিল বুকে
মৃত শরীর মাটির খাবার, এতদিনে একটুও তার নেই বাকি আর।
আমি যায় যে বয়ে, বাতাস হয়ে, সকাল সাঁঝে,
পাখীর কন্ঠে সুরের মাঝে।
যখন সূর্য কিরণ ঠিকরে পড়ে তোর উপরে
বাতাস যখন যায় দুলিয়ে, চোখ মুখে তোর দেয় বুলিয়ে
ভাববি আমি আছি তাতে, নেব তোকে সাথে করে।
খোকা, যা ফিরে তুই নিজ ঘরে, শুধু শুধু ভিজিস নারে
কষ্ট যত তা সব শরীরে, আত্মাকে না ছুঁতে পারে
শরীর ছেড়ে আমরা এখন আলো, এখানে সবাই আছি ভাল।
চোখ থেকে জল মুছে ফেল খোকা, কাঁদিস কেন খামাকা!
যার লাগি কাঁদিস জাগি, দিন রাত নির্বিশেষ,
কবরে তার নেই কিছু আর, অবশেষ।
শরীর সেত কেবল কায়া, মনে জাগায় শুধু মায়া,
অবুঝ মন, করায় শুধু স্মরণ, সবই তা অস্থায়ী আর ছায়া।
স্থায়ী কেবল আলো,
আছি আমি তোরই পাশে আলো কিম্বা কালো।
খোকা সোনা, কালো দেখে ভয় পাবি না,
কালো মানে আলো আছে, ধারে কাছে খুব দূরে না।
যখন যেদিন কোন ক্ষনে, আমাকে তোর পড়বে মনে
চোখ খুলে নয়, বন্ধ করে খুজবি মোরে।
চোখ শুধু দেখতে পারে, যা কিছু থাকে আকারে
আমিতো আকার ছেড়ে, আছি নিরাকারের নীড়ে।