Heading
আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৫৯
অস্তাচলে ক্লান্ত দিনমণি
চারিদিকে কেবলি শুনি, ঘরে ফেরার পদধ্বনি।
সব কাজ ছেড়ে পাখীরা উড়ে উড়ে
ফিরিছে যে যার নীড়ে।
দিন শেষ করি বৃদ্ধ খেয়ারী
পড়িছে ভেঙ্গে ক্লান্ত দেহ, পাশে নেই কেহ
ভিড়িয়েছে ঘাটে কোনমতে, ছোট সে তরী।
চলে না হাড্ডিসার দেহ, নেই তাতে কোন মোহ
গুনিছে খেয়াকড়ি, ফিরিবে বাড়ী তাড়াতাড়ি।
খেয়ারী উঠে দাঁড়ায়, যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়
দেহে নেই একটুও বল, দেহখানি করে টলমল
নাও ওঠে টলে, পাটাতন তলে জল করে কলকল।
ভাবিল খেয়ারী, আর কত!
চোরা ফুটো, নিশ্চয় আছে এক দুটো!
নড়বড়ে তরী ঢুকিছে জল অবিরত।
ফুটো নাও তল, চুয়িয়ে উঠিছে জল
সাথে নেই কোন সেঁওতি।
ঘনিছে আঁধার সাথে নেই কোন বাতি
ভাবিছে মাঝি আজি আর নেই কোন গতি।
না সেচিলে জল, হবে কি কাল!
জল ঢুকে সারারাত ধরি, ডুবে যাবে তরী।
কি হবে তার, কি করে করবে পারাপার!
ভাবিছে মাঝি বসে একাকী, হল এ কি!
চারদিক গিলিছে আঁধার।
গাছ পালা সব নিরবে দাঁড়িয়ে
ঊর্ধ্বাকাশে সব বাহু বাড়িয়ে।
মন মত, করেছে নিজ নিজ ছায়া দীর্ঘায়িত
বৃহৎ ছায়ার কাছে কায়া যেন মিছে অখ্যাত।
এখন এ আঁধারে হায়! নিজেকেও দেখিতে না পায়
সব হয়ে গেছে ছায়া বিনা কায়া, এ সময়।
গুটাতে চায় মাঝির হৃদয়, সব ভবলীলা।
মন বলে হায়! তা কি করে হয়?
বাকি আছে কাজ মেলা।
নিস্তব্দ চারিদিক!
সবে গেছে ফিরে নিজ নিজ ঘরে, ঠিক ঠিক।
জাগিয়া উঠিছে মুক বধির পয়স্বিনী
আকাশে বাতাসে কেবল তারই কুল কুল ধ্বনি।
ঘাটে বসে খেয়ামাঝি, অসহায় আজি
ভরিছে জলে তার ফুটো নাও খানি।
মন করে আনচান, নিরুপায় মঝি পাতে কান
কি বলিছে পয়স্বিনী সে কথা শুনি।
‘শোন নাইয়া! কান দিয়ে নয় হৃদয় খুলিয়া
-কেবল নিঃশেষেই মুক্তি, এটা নয় কোন অত্যুক্তি’।
দেখেছো বেলাভুমিতে কখনো থাকতে শুয়ে
মুক্তা বিলিয়ে নিঃশেষ হয়ে,
খোলা বুকে আকাশে তাকিয়ে
হা করে থাকা, বালু মাখা কোন শুক্তি!
হৃদয় ভরা তার বিধাতার প্রতি ভক্তি
পেয়েছে সে পুরোপুরি মুক্তি।