জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে কবিতা 'বার্ধক্য' ।

আপডেট: ২৩ Jun ২০২২, ১৮:১৮

বার্ধক্য

 

বার্ধক্য অমোঘ বিধান বিধাতার, জীবনের শেষ পরীক্ষাগার।
শেষ প্রশ্নপত্র সেই পাবে হাতে, সে অব্দি যে পারবে যেতে।

দাঁড়িয়ে পাহাড়ের গোড়ায়, বোঝা কি যায়, কি আছে চুড়ায়!
সবার হয় না সে ভাগ্য, অতদুর যাওয়ার হয়না সবাই যোগ্য।

বৃদ্ধ বয়সে জীবনের শেষে, ইন্দ্রিয়েরা সব ক্ষমতা হারায়।
যত যত্ন নাও, যত চিকিৎসা করাও
সময়ের টানে সব অসহায়, সব শেষ হয়ে যায়।

বলে সবে মানুষ যবে বৃদ্ধ হবে, হয়ে যাবে শিশুর মত।
তা যদি সত্যি হত, তবে সব ছেড়ে যার যা আছে যত
সবে মিলে, দলে দলে বৃদ্ধ হওয়ার পাল্লায় হত রত।

শিশুর জীবন সেতো আনন্দ আশ্রম, সবই সুন্দর স্বপ্নিল
অর্জনের নেই কোন তাড়া, শ্রম ছাড়া সব কিছু পায় তারা।
বৃদ্ধের জীবন, অতৃপ্তিতে ভরা মন, হিসেবে সব গড়মিল।
শিশুর মতই চলে হাটে, অসহায় বটে, তবে যেন মাতৃহারা।

বৃদ্ধ বয়স মানুষ হয়ে যায়, শারীরিক অসহায়
কাপড় জড়ানো বাশের কাঠামো কাকতাড়ুয়া ছাড়া কিছু নয়।
বাতাসের জোরে নড়ে চড়ে, একটু ঝড়ে ভেঙ্গে নিচে পড়ে
ছেড়া নষ্ট কাপড়ে পড়ে রয়, যদি কেউ না বদলিয়ে দেয়।

অদম্য মায়ার টানে, সবাই বাচতে চায় এ ভুবনে
তার মানে এই নয়, সবাই বৃদ্ধ হতে চায়।
বৃদ্ধ হওয়া ভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের কিছু নয়
সময় হলেই সবাইকে বৃদ্ধ হতে হয়।

বাকি সব বাদ, কেউ কি নিতে চায় বোঝা হয়ে বাচার স্বাদ!
এ সময় হায়, সব অর্জন ছেড়ে যায়, আপন সবাই বিরক্ত হয়।
শুধু গলগ্রহ নয়, সব কিছু মুখে তুলে দিতে হয়।

দয়া নির্ভর বলে কাকে;
জ্ঞান আছে সকল, দেহে নেই বল, অন্যের সাহায্যই সম্বল।
কত অসহায়! নিজের কাছে নিজেকে বোঝা মনে হয়
সাহায্য ছাড়া দিতে পারে না সাড়া, প্রকৃতির ডাকে!

হোক না আপন জন, তারাও ধৈর্য রাখবে কতক্ষন!
বৃদ্ধেরা যেন শরীরের খাঁচা, কেবল মরার জন্য বাচা!

এসব কি শাস্তি! তবে কেনই না এ প্রাপ্তি!
পৃথিবী যদি হয় শাস্তির আখড়া, তবে বার্ধক্য তার চুড়া।
অন্য কিছু না, মৃত্যুই কেবল শেষ করে সকল দুঃখ বেদনা
নেই অন্য কোন যুক্তি, মৃত্যুই দিতে পারে জীবন থেকে মুক্তি।