জীবন থেকে নেয়া কাহিনী অবলম্বনে রচিত ছোট গল্প 'আকাঙ্ক্ষা কখনো মরে না'।

আপডেট: ০২ মে ২০২৩, ১৪:৫২

আকাঙ্ক্ষা কখনো মরে না

 

সেদিন অরপার বাবা বাদল মন্ডল অপুকে ডেকে বলল –বাবা, অরপার বিয়ে ঠিক হয়েছে ফেব্রুয়ারির পনেরো তারিখে, আমাদের বাসার সামনে খোলা জায়গায় প্যান্ডেল বানিয়ে অনুষ্ঠান করব ভাবছি, তুমি তো বাড়ীতেই আছ, তোমাকেই কিন্তু দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে হবে।
বাদল মান্ডল ওদের একই পাড়ার বাসিন্দা। অপুর বাবা আর বাদল মন্ডল বন্ধু, তাই তাকে চাচা বলে ডাকে অপু। পারিবারিক সম্পর্ক ওদের, বিভিন্ন সামাজিক আর পারিবারিক অনুষ্ঠানে দুটো পরিবারের সব সময় মেলামেশা হয়। বাদল মন্ডল এখানকার আদি বাসিন্দা আর অপুর বাবা চাকরীর সুত্রে এখানে আসা। দীর্ঘদিন চাকরীর করে অবসরের পর বাদল মন্ডলের সাহায্যেই অপুর বাবা এখানে জমি কিনে বাড়ী তৈরি করে এখানকার বাসিন্দা হয়ে গেছে।
বাদল মন্ডলের দুই মেয়ে অরপা আর অনন্যা। অপু আর অরপা ছোট কাল থেকেই একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়াশোনা করেছে। প্রথম দেখাতেই অরপাকে ভাল লেগেছিল অপুর।
একহারা শারীরিক গড়নের ফর্সা চেহারার মেয়ে অরপা, বরাবরই একটু লাজুক প্রকৃতির।
ক্লাস সেভেন পর্যন্ত অপু ক্লাসের মনিটর ছিল। ক্লাসের সবাই কে কোথায় বসবে ক্লাস টিচারের অনুমতিক্রমে সাপ্তাহিক সিট প্লান অপুই বানাত। অপুর সিটটা মনিটর হিসেবে নির্ধারিত থাকতো, দুই রো’তে সাজানো বেঞ্চের প্রথম সারির ডান দিকের প্রথম সিটটা ক্লাস মনিটরের।
ক্লাসের অন্যান্য সবার সিট প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তন করা হত। অপু সিট প্লান তৈরির সময় অরপার সিটটা সব সময় ওর নজরের মধ্যেই ওর সিটের আসে পাশেই রাখতো।
এটা সে কেন করতো প্রকৃতপক্ষে তা ও নিজেই জানত না। বিষয়টা অন্য সকলের নজর এড়িয়ে গেলেও ধীরে ধীরে সেটা অরপার নজরে পড়াই সে একদিন নির্ধারিত সিটে না বসে পিছনের বেঞ্চে বসা ওর এক বন্ধুর সাথে সিটটা অদল বদল করে নিল।
ঘটনাটা অন্য সকলের নজর এড়িয়ে গেলেও অপুর নজরে তা পড়ল।
অপু অরপার সাথে তেমন কথাবার্তা না বললেও ওকে যে নজরে নজরে রাখত সেটা বোধহয় অরপা বুঝতে পেরেই সে তার সিটটা পরিবর্তন করে নিয়েছিল।
টিফিনের আগ পর্যন্ত সে ভাবেই চলল। টিফিন পিরিয়ডে অপু সিট প্লান দেখিয়ে অরপার জায়গায় বসা মেয়েটাকে পিছনে বসিয়ে অরপাকে সামনে বসতে বলল।
অন্য মেয়েটা তা বিনা বাক্যে মেনে নিলেও অরপা কিছুতেই মানতে চায়ল না। অপু জোরাজোরি করাতে অরপা সেদিন ক্লাস টিচারকে অভিযোগ করলে তিনি অপুকে বকা দিয়ে অরপার সিট পরিবর্তন করে দিলেন।
সেদিন অরপা কেনই বা ওর সিট পরিবর্তন করে নিয়েছিল, আর টিচার কেনই বা অপুকে বকাবকি করেছিলেন তার কিছুই অপু ঠিক বুঝতে পারল না। সেদিন বাকি সময় ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে কাটাল অপু। টিচারের বকুনী আর অরপার ওর কাছ থেকে দূরে বসার বিষয়টি নিয়ে সেদিন ক্লাসে বসে বসেই একান্তে ভেবেছিল অপু, কিন্তু তার কোন কূলকিনারা করতে পারিনি।
কেন অরপাকে ওর আশেপাশে বসাতে চায়? বাড়ী ফিরে সেই প্রথম বিষয়টা নিয়ে প্রথম বারের মত ভেবে নিজেকে নানা প্রশ্নের সন্মুখিন করেও তার কোন সদুত্তর খুজে বের করতে পারল না অপু।
তারপর থেকে অপু ক্রমান্বয়ে পড়াশোনায় কিছুটা অমনোযোগী হয়ে উঠল। সে বছর ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারল না অপু। আর ওর মনিটর হওয়ার সুযোগও চলে গেল।
যাহোক, তারপর ওই স্কুল থেকে ওরা দুজনি এইচ এস সি পাশ করে যে যার মত ইউনিভার্সিটিতে চলে গেল। এ দীর্ঘ সময়ে ওদের দুটো পরিবারের মধ্যে আগের সম্পর্ক অটুট রইলো। ছুটিতে বাড়ী আসলে অপু আর অরপা পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে একে অপরের সাথে বিভিন্ন ভাবে মেলামেশা করেলেও অরপার আর অপুর সম্পর্কটা আগের মতই রয়ে গেল।

ওরা দুজনই ইউনিভার্সিটির পড়া শেষ করে বাড়ী ফিরেছে কয়েক মাস হল। এর মধ্যেই ওদের একে অপরের সাথে একাধিকবার দেখা হয়েছে কুশলাদিও বিনিময় হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মে। একে অপরের পড়াশোনা বা জীবনে কে কি করতে চায় সে সব নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
কিন্তু আজ যখন অরপার বাবা মেয়ের বিয়ের আয়োজনের জন্য সন্তানতুল্য অপুর কাছ থেকে সহায়তা চায়ল তখন অপুর মনের ভিতরটা কেন জানি মোচড় দিয়ে উঠল।
বাদল চাচার কথার উত্তরে কিছুই বলল না অপু। কিছুক্ষণ তার চোখের দিকে নীরবে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করে সে স্থান ত্যাগ করল।
অপুর ভিতর এ পরিবর্তনটা অরপার বাবার চোখ এড়াতে পারল না। তার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক মনে হল। তিনি অপুর আনত মস্তকে গমন পথের দিকে তাকিয়ে দেখলেন কিছুক্ষণ।
অরপার বাবা অপুকে খুব পছন্দ করেন এবং সন্তানের মত ভালবাসেন, তাই অপুর এহেন ব্যবহারে তিনি বেশ ব্যথিত ও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাড়ী ফিরে তিনি তার স্ত্রী এবং মেয়েদের সাথে পুরো ঘটনা বর্ণনা করলে পরিবারের সবাই তার মত অবাক হয়ে রইল।
সবাই কিছু না কিছু মন্তব্য করে সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করতে চাইলেও অরপা কোন মন্তব্যকরল না, কেবল সবার কথা শুনল।

চারিদিকে তখন স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি দিনে দিনে আরো খারাপ হতে শুরু করায় বাদল মন্ডল মেয়ের বিয়েটা যথাদ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাইলেন। কিন্তু বিধি বাম, তার আগেই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়াতে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়েটা স্থগিত করা হল।
শহরে ধরপাকড় শুরু হল। শহরবাসীর সাথে অরপা আর অপুর দুটি পরিবার রাতের আঁধারে শহর ত্যাগ করে গভীর গ্রামে পালানোর মনস্ত করল। অপুর পরিবার এ অঞ্চলে নতুন বাসিন্দা কিন্তু বাদল সরদার এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দা হওয়াই এ অঞ্চলের গ্রামে তার জানা শোনা আত্মীয় পরিজন ছিল আর তাই এ বিপদের সময়ে বন্ধু পরিবারকে সাথে নিয়েই তারা শহর ত্যাগ করল।
শহর ছেড়ে প্রথমে ভ্যান রিকশা করে পাশের গ্রামে একদিন অবস্থান করে পরদিন সেখান থেকে নৌকা করে সন্ধ্যার পর গভীর গ্রামে যাওয়ার উদ্দ্যেশে রওয়ানা হল দুটি পরিবার।
সেবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই প্রচুর বৃষ্টি হতে শুরু করল। নদী নালা খাল বিল সব পানিতে ভরে গেল। বড় ছই ওয়ালা নৌকাটা ঘুটঘুটে অন্ধকারের বুক চিরে এগিয়ে যেতে লাগলো।
নৌকায় কোন রকম আলো জ্বালানো নিষেধ আর কথাবার্তাও নিন্ম স্বরে বলার জন্য বলা হল। ঘুট ঘুটে অন্ধকার আর বাইরে কেবল বৃষ্টির শব্দ। মাঝে মাঝে মাঝির বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দ। ছইয়ের মধ্যে অন্ধকারে নিঃশব্দে চিড়া মুড়ি চিবুতে চিবুতে ঘুম আধাঘুমে দুটো পরিবার জীবনের ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইল।
রাত ঠিক কত বলা মুস্কিল, হটাৎ করে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে বিকট শব্দ নিকষ কাল নির্জনতাকে ভেঙ্গে খান খান করে দিল। নৌকার ভিতর সবাই একে অপরের উপর নির্ভর করে আঁটসাঁট হয়ে বসলো।
-মুক্তি বাহিনী সামনে নদীর উপর ব্রিজটা বোধহয় উড়িয়ে দিল, পাক সেনারা যাতে গ্রামে ঢুকতে না পারে। বাদল মন্ডলের কন্ঠে একটা স্বস্তির ভাব বোঝা গেল।
-বাবু, এ মুহূর্তে সামনে এগোনো ঠিক হবে না, নৌকা পাশে কোথাও ভিড়াই।
বাদল চাচা আর বাবা দুজনই মাঝির কথাই সাঁই দিল।
ঘুট ঘুটে অন্ধকারে আন্দাজের উপর ভর করে মঝি নৌকাটা ভিড়াল।
-কারো নামার দরকার নাই, আমি দেখি ডাঙ্গায় কি আছে।
মাঝি ডাঙ্গা দেখতে নেমে গেল। পাথর কাল অন্ধকার, নৌকার ভিতর শুধু চাপা নিঃশ্বাসের শব্দ। বাইরে বৃষ্টি অবিরাম ঝরছে।
আধা ঘন্টার মধ্যে মাঝি ফেরত এসে জানালো ঘাটের অদূরে পুরনো একটা জমিদার বাড়ী আছে, ফাঁকা সবাই বিদেশে থাকে, দারোয়ানের সাথে কথা বলে তাকে সব জানিয়েছে, সবাই চাইলে নেমে রাতের জন্য সেখানে বিশ্রাম নিতে পারেন।
বাবা আর বাদল চাচা নিজেদের মধ্যে যৎসামান্য আলোচলা করে সবাইকে নিঃশব্দে নামতে বলল।
বৃষ্টি একটু কমলেও আকাশটা কালো মেঘে ঢাকা। রাত কত হল সেটা বোঝার কোন উপায় নেই।

দারোয়ানকে পুরোপুরি দেখা না গেলেও তার কথাবার্তা চালচলনে বোঝা গেল বেশ বয়স হয়েছে, বাবা আর চাচার থেকে নি:সন্দেহে বড়।
-আমি দুটো ঘর খুলে দিচ্ছি। ভিতরে টিউবয়েল আছে সেখানে হাত মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। ঘরে হেরিকানের ব্যবস্থা করছি, বাইরে আলো না জ্বালানোই ভাল।
দারোয়ানের কথায় সবাই ভিতরে প্রবেশ করল।
দোতলা বাড়ীর একধার দিয়ে উপরে উঠা নামার সিড়ি। বাড়ীটার সামনে খোলা উচু বারান্দা। তার সামনে বেশ খানিকটা খোলা জায়গা।
অপু বারান্দায় এসে দাড়াতেই আলো আধারিতে দেখল সিড়ি দিয়ে কারা নেমে আসলো।
দুজন ছেলে ওরই সম বয়সী হবে। চাপা স্বরে কথা হল ওদের সাথে। নিজেদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত পরিচয় পর্ব শেষে জানালো যে তারা কয়েকজন মুক্তি যুদ্ধে যোগ দিতে যাচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে এখানে এসেছে ভোর না হতেই বেরিয়ে পড়বে ওরা।
অপু তার নিজের মুক্তি যুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্তের কথা ওদেরকে জানালো।
ছেলে দুটো চলে যাওয়ার পর অপু লম্বা বারান্দার একপ্রান্তে অবস্থিত সিমেন্টের তৈরি একটা বেঞ্চের উপর বসলো।
ভাবতে লাগলো -কি ভাবে কথাটা বাবা মাকে বলবে? তারা কি যাওয়ার অনুমতি দেবে! বাবা অনুমতি দিলেও মা খুব কান্নাকাটি করবে।
ভাবনায় ডুবে ছিল অপু।
অন্ধকারের মধ্যে কে একজন আসলো বারান্দায়। অপুর মনে হল অরপা নাত!
জীবনের সব ঘটনা; সুখ দুঃখ, চাওয়া পাওয়া এমনকি কোন ইচ্ছে যা মনের কোনে উঁকি দিলেও কখনো তা প্রকাশ করা যায়নি তার সব কিছু মানুষের অবচেতন মনে স্থায়ী ভাবে স্থান করে নেয়। মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা কখনো মরে না, বিভিন্ন কারণে চাপা পড়ে থাকে। চলতি জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে সেগুলো চেতন মনের অজান্তেই উঁকি ঝুঁকি দেয়।
এই অচেনা অনিশ্চিত পরিবেশে অরপাকে অপু তার সামনে দেখে পরিষ্কার বুঝল সে মনের গভীরে ওকেই খুঁজছিল।
অরপা এসে নীরবে বসলো অপুর পাশে। একটা মিষ্টি গন্ধে ভরে গেল চারদিক। স্কুল জীবনে অরপাকে বলতে গেলে প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে দেখেছে, কাছাকাছিও বসেছে, কিন্তু কেউ কারো চোখে চোখ রেখে কথা বলেনি।
আজ কেন জানি অরপার চোখে চোখ রেখে কিছু কথা বলতে অপুর খুব ইচ্ছে হল, কিন্তু প্রকৃতি আর পরিস্থিতি বাম। একে অপরের চোখের দিকে তাকালেও কেউ কাউকে দেখতে পেল না।
হায় রে নিয়তি! যখন চারদিক আলো ভরা ছিল, মনের ভিতর সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা ছিল, অরপার চোখে চোখ রেখে দুটো কথা বলতে তখন অজানা এক দ্বিধা বাদ সেধেছিল। আর আজ এ মুহূর্তে যখন ওর মুখটা দেখতে, চোখে চোখ রাখতে ইচ্ছার তীব্রতা সব দ্বিধার বাধ ভাঙ্গল তখন প্রকৃতি বাধা হয়ে দাঁড়াল!
অন্তরের কথা বলতে দেরী হয়ে গেলে বোধহয় এমনটিই হয়!
অরপা আসাতে অপুর হৃদয় মন এক অভূতপূর্ব অনুভব অনুভূতিতে আন্দোলিত হল। অপু পরিষ্কার বুঝল এ মুহূর্তে ও অরপাকে পাশে চায়ছিল।
-অরপা কি ওর মুক্তি যুদ্ধে যোগ দেয়ার ব্যপারে ওদের সাথে কথাবার্তা শুনে ফেলেছে! ভাবল অপু।
-শুনলেই বা কি, ওর এই সিদ্ধান্তের ব্যপারে অরপার কি কোন ভুমিকা আছে? তাহলে কেন এ মুহূর্তে অরপাকে চাচ্ছিল সে!
অন্ধকারের একটা অনন্যতা আছে, অন্ধকার দ্বিধান্বিত মানুষের মনে এক অজানা সাহস যোগায়। জীবনের অনেক মুহূর্ত আসে যখন যে কাজটি সারা জীবন আলোর নিচে করা যায়নি অন্ধকারে তা নিমিষেই করা যায়।
অরপা একটু ঘন হয়ে বসে অপুর একটা হাত ওর হাতের ভিতর নিল। তাতে দুটো শরীরে অভূতপূর্ব অনুভুতি অনুভবের বন্যা বাঁধ ভাঙ্গলেও ওদের দুজনের মুখের উপর প্রতিভাত হয়ে ওঠা অভিব্যক্তিটা সবার নজর এড়িয়ে গেল।
-যুদ্ধ যখন শুরু হয়েছে তখন এদেশ স্বাধীন হবেই, এ সংগ্রামে সবার অংশগ্রহন খুব জরুরী।
অরপা অপুর মনের কথায় বলছে। ও কি ভাবে বুঝল ওর মনের কথা! কোন ভাবেই অপু সে ভাবনাটা অরপার কাছে প্রকাশ করেনি, তাহলে!
ভাবল অপু।
-ঠিক আছে তুমি যাও, আমি তোমার বাবা মাকে সব বুঝিয়ে বলব।
একবার মনে হল সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে এই আধারের আবরণের ভিতর অরপাকে বুকে জড়িয়ে ধরুক। কিন্তু আবার মনে হল –কেন ওকে বুকে জড়িয়ে ধরবে? কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য! কিন্তু আমাদের সমাজে ওভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দৃষ্টিকটু, আপত্তিকর। তাহলে!
-তুমি যাও, তোমার হৃদয়ের কথা মত কাজ কর। হৃদয় কখনো কাউকে ফাঁকি দেয় না অপু।

এই মুহূর্তে অরপার মুখটা দেখার খুব ইচ্ছে হল অপুর, কিন্তু তা যে কিছুতেই সম্ভব না।
অরপা অপুর হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বলল –স্বাধীন দেশে তোমার সাথে আমার দেখা হবে, তখন অন্ধকারে নয় ঝলমলে আলোতে হাজার করতালির মধ্যে আমাদের দেখা হবে।
উঠে দাড়াল অরপা যাওয়ার জন্য।
-তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করব অপু।
অপুর হাতটা উঁচু করে ধরে নির্দ্বিধায় তাতে চুম্বন করে আধারে মিলিয়ে গেল অরপা।