Heading
আপডেট: ১৭ Jul ২০২৩, ১১:১৬
হাসপাতাল নির্মানের প্রথম ধাপের কাজ শেষ করতে প্রায় এক বছর সময় লেগে গেল।
ডাঃ অনিরূদ্ধ আর লাবনী ওদের নতুন বিল্ডিংয়ে সব স্থানান্তর করে নিয়েছে ইতিমধ্যেই।
তাছাড়া ওরা দুজনেই এখন চৌধুরী এষ্টটেই অবস্থান করে। অনিরূদ্ধ একা আর লাবনী ওর ছয় বছরের ছেলেটাকে নিয়ে থাকে।
ডাঃ লাবনীর ছেলেটা খুব রোগা আর লাজুক, নাম সাগর। প্রথম প্রথম নিজেকে গুটিয়ে মায়ের সাথে সব সময় লেগে থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই ওর পদচারনা চৌধুরী এস্টেটের সর্বত্র। চৌধুরী এষ্টেটের সবার সাথে ওর সখ্যতা। চৌধুরী এষ্টেটে ও যেন এক নতুন প্রাণের স্পন্দন।
অত বড় বাড়ীতে সাগর যে কখন কোথায় থাকে তা বলা মুষ্কিল। প্রথম প্রথম ডাঃ লাবনী ওকে নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা করতো। কিন্তু এই কয়েক মাসেই সাগরের শরীর আর মনের পরিবর্তন লাবনীর মনের সে আশঙ্কা দূর করেছে। খাওয়া আর ঘুম ছিল যে সাগরের চরম অনীহার বিষয় এখন তা নিয়ে লাবনীর চিন্তা করতে হয়না।
ওর খাওয়া দাওয়ার ভারটা মোটামুটি নীলিমা চৌধুরী নিজের থেকেই গ্রহন করেছেন। আর সারাদিন খেলাধুলোই ব্যস্ত থেকে সন্ধ্যার পর সাগর আর ওর চোখ দুটো খুলে রাখতে পারে না।
সাগরের সাথে সবারই ভাব এ বাড়ীর। সকালে নাস্তার পর হয় নীলিমা চৌধুরীর সাথে বাগানে ছুটো ছুটি করে, নইলে অমরের হাত ধরে সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে ব্যস্ত।
আর অন্য কেউ না থাকলে রামদয়ালই ওর সাথী।
সবাই খুব আদর করে ওকে। বছর খানেকের মধ্যেই ও বেশ শক্ত সামর্থ হয়ে উঠেছে, গায়ের রংটা বেশ ফর্সা। প্রতিদিন সকালে নীলিমা চৌধুরীই সাগরের জামা কাপড় পছন্দ করে পরিয়ে দেন। দৌড়া দৌড়ীতে মাথাটা ঘেমে থাকে বলে নাপিত ডাকিয়ে একদম ছোট ছোট করে চুল ছাটিয়ে দিয়েছেন নীলিমা চৌধুরী।
এমনিতেই চুলগুলো একটু খাড়া খাড়া ওর, আর ছোট করে ছাটার ফলে পুরোপুরি খাড়া খাড়া হয়ে থাকে। খাড়া চুল, লম্বা নাক আর বড় বড় চোখে ওকে অপূর্ব লাগে। দুষ্টুমিতে ভরা ওর সারা মুখটা। মুখ টিপে টিপে হাসে ও। হাসলে পিছন থেকে দেখলেও বোঝা যায়। কারণ ওর হাসি শুধু ওর দাতে আর ঠোটেই কেবল প্রকাশ পায় না, ওর কান ওর চুল ওর প্রতিটি অঙ্গই হাসে ওর সাথে।
একদিন দুপুরের একটু পরে ডাঃ লাবনী খাবার খেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে বিশ্রাম করছে। সাগর রামদয়ালের হাত ধরে টানতে টানতে ওর অফিসে নিয়ে আসলো।
-মামনি, দেখ এই কাকু এদিকে আসবেই না, আমি তাকে জোর করে টেনে টেনে নিয়ে এসেছি। ওনার নাকি এদিকে আসতে মানা।
একটু অবাক হয়ে তাকালো লাবনী।
রামদয়ালের সাথে প্রথম দিনই দেখা হয়েছে আলাপও হয়েছে। মাঝে মধ্যে দেখা হলে দূর থেকেই দুহাত তুলে নমস্কার করে। নীলিমা চৌধুরীর খুব ঘনিষ্টজন রামদয়াল, অমর এবং অনিরূদ্ধ দুজনেই ওকে সন্মানের চোখে দেখে, সেটা জানে ডাঃ লাবনী।
-উনি নাকি পুরনো মানুষ, তাই আধুনিক কিছুই বোঝে না। উনি কেবল ওই তোমার চৌধুরী বুড়ী মানে দাদিমাকেই চেনে, তাই কেবল তার কাছেই যায়। আর বাকিরা সব তার অচেনা।
ডাঃ লাবনী মৃদু হেসে ছেলের কথা শুনছিল।
সাগর ওর মায়ের গা ঘেসে দাড়িয়ে গলার স্মরটা একটু নামিয়ে বললো- সেদিন এই কাকুই চৌধুরী বুড়ীকে দাদিমা বলে ডাকার কথা বললো। আর অমনি চৌধুরী বুড়ীও আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললো -রামদয়াল তুই ঠিক বলেছিস ও আমাকে দাদিমা বলেই ডাকবে।
ছেলের কথায় রামদয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো লাবনী।
-জানো মা, চৌধুরী দাদিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদছিলো।
একটু থেমে সাগর কি যেন একটা ভেবে নিল তারপর ওর মায়ের কানে মুখ লাগিয়ে কথাটা বললো।
কথাগুলো শেষ করেই সাগর রামদয়ালকে বাইরে যাওয়ার জন্য আবার টানাটানি করতে লাগলো।
-আপামনি, ও ছেলে মানুষ কি বলতে কি বলে।
সাগরের টানাটানিতে যেতে যেতে রামদয়াল লাবনীর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো।
কিছুক্ষণ ওদের গমন পথের দিকে চেয়ে রইল লাবনী।
ডাঃ লাবনীর স্বামী সম্পর্কে অমর বা ডাঃ অনিরূদ্ধ কেউই কখনো জিজ্ঞেস করেনি কোন কথা। কথার ফাকে লাবনীর অনেকবার মনে হয়েছে এই বুঝি জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু ঐ প্রসঙ্গটাতে ওদের দুজনার কারোরি যেন কোন উৎসাহ নেই।
ব্যপারটা একটু অস্বাভাবিক লাগে লাবনীর।
তবে হ্যাঁ এ ব্যপারে প্রথম দিনই কোন ভুমিকার অবতারনা না করে সরাসরিই জিজ্ঞেস করেছিলেন নীলিমা চৌধুরী।
-দেশের বাইরে থাকে।
লাবনীর এই সংক্ষিপ্ত জবাবের পর তারা প্রসংঙ্গ পাল্টিয়েছিল। আর কখনো ওই প্রসঙ্গটা ওঠেনি তাদের আলাপে।
তবে সেদিন প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে নীলিমা চৌধুরী তার নিজের সম্পর্কে অর্থাৎ তার সাথে আমির চৌধুরীর সর্ম্পকের ব্যপারে আর অমর সম্পর্কে অল্পবিস্তর ধারণা দিয়ে বোধহয় নিজেকে হালকা করতে চেয়েছিল।
-লাবনী, তুমি আমার মেয়ের মত, তোমার মনের যে কোন কথা তুমি নিঃসঙ্কোচে আমাকে বলতে পার। তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে মা।
একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন নীলিমা চৌধুরী।
-কি চায়লাম আর কি হলো!
একটা চাপা নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল নীলিমা চৌধুরীর বুক খালি করে।
সেদিন বেশী কথা না হলেও পরে একদিন আলাপের ফাকে নিজের স্বামী সন্তান সম্পর্কে স্ববিস্তারে অনেক কথা বলেছিলেন নীলিমা চৌধুরী।
কিন্তু অত কথা কেন ডাঃ লাবনীকে বললেন তিনি আর কথাগুলো বলে আসলে কিইবা তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন তার কোনটায় লাবনীর কাছে পরিষ্কার নয়।