জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে ছন্দ কবিতা 'ভবঘুরে-২'।

আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৬

ভবঘুরে-২


এ সমাজে ধনবান যারা, দান করে তারা, দুহাত ভরে
যত করে দান, তা থেকে ব্যয় বহুগুন, নিজের প্রচারে!

কি লাভ সে দানে, সমাজ যদি না তা জানে!
সে কথা বোঝে ধনবান।
তাইতো না হলে প্রচার, মন তার, করে আনচান।

সামগ্রী কাড়ি কাড়ি, দানের ধন ছড়াছড়ি, সরবরাহ অতল।
লাল সালু ঘেরা প্যান্ডেল, মঞ্চ ভরা খয়রাতে অঢেল
সামিয়ানা তলে, লাল নিল বাতি জ্বলে
ক্যামেরার চোখ ঘোরে, একটু মিটকিও না মারে
প্রহরিরা তৎপর, চারদিকে সব চোর, অভাবীর দল।

দামী কার্পেট খাসা, গদিআটা চেয়ার সোফা ঠাসা।
সামনে যখন নামি দামি জন, থাকবে বসা
দেখাবে সে দান অতি মহীমান, তাতে বাড়বে সম্মান।
এসব খুব দরকার, না হলে জমবে না প্রচার,
বাড়বে না নেতার মান।

অদূরে থালা হাতে, বসে ফুটপাথে,
মাগিছে ভিক্ষা অন্ধ ভিখারি, দেখে পথচারি।

পেটে ক্ষুধার জালা, সমুখে পাতা জীর্ণ টিনের থালা
কাড়ি কাড়ি নয়, দু একটা টাকা করে সবাই, দিচ্ছে থালা ভরি।
করিছে দান সবে চুপিসারে, কেউ দেখল কিনা নেই তা বিচারে
নেই কোন প্রহরী, তবু করছে না কেউ সে দান চুরি!

আজি এ দ্বিপ্রহরে অদূরে দাঁড়িয়ে সেই ভবঘুরে
ভাবিছে দেখে- কি অপরুপ দানের দৃশ্য ঘটিছে সমুখে!

ভাবে ভবঘুরে -বৃদ্ধ ভিখারি একাকী ঘরে
রাত গভীর, কাপিছে জ্বরে সারা শরীর বৃদ্ধ ভিখারির!
কেউ কি আছে! কপালে বুলিয়ে হাত, নেবে তাকে কাছে!
চোখ দুটো ভিজে যায়, ভাবে -সে নিরুপায় এক ভবঘুরে।

হটাৎ মাথার উপর, কালো কুৎসিত এক কাক
কা কা করে দেয় ডাক
পেয়ে সম্বিৎ ফিরে, সেদিকে তাকায় ভবঘুরে।

অন্ধ ভিখারি, বেচে আছে এত কাল ধরি, এ ভবে!
ভাবে ভবঘুরে -বয়স কম করে, সত্তর তো হবে।

ভবঘুরে মুচকি হাসে, মলিন মুখখানি তার খুশিতে ভাসে।
যেন নিজেকে উপহাস করে
উড়ন্ত কাক পানে দেখে আশ্বস্ত নয়নে, নিজ পথ ধরে।