Heading
আপডেট: ২০ Jul ২০২৩, ১৩:২৬
কলিমুল্লা সরকার ভেবেছিলেন চাকরী থেকে অবসরের পর কেবলই বিশ্রাম।
কিন্তু চাকরী জীবন শেষ হওয়ার পরই তিনি বুঝলেন, বিশ্রাম নেয়ার সময় এখনো আসেনি তার, অনেকটা পথ এখনো বাকি।
এ যেন কোন পর্বত আরোহী কাঙ্ক্ষিত চুড়ায় উঠে বিশ্রাম নেবে বলে মনঃস্থির করার সময় হটাৎ মেঘ সরে সামনে নতুন চুড়া দৃষ্টিগোচর হয়ার পর সে যেমন অবাক হয় অনেকটা তেমন।
ছেলেটা তখনো বেশ ছোট, জীবনের প্রতিযোগিতায় নিজ পায়ে দৌড়াতে তখনো অনেক বছর বাকি তার।
ছেলে মেয়ে দুটোর বয়েসের পার্থক্য দশ বছরের। মেয়েটার জন্মের সময় কলিমুল্লা সরকার ত্রিশ বছরের টগবগে যুবক। প্রায় পাচ বছর সংসার করার পর মেয়েটার জন্ম। সত্যিকার অর্থে মেয়েটা ওদের দাম্পত্য জীবনকে পূর্ণতা দান করেছিল।
চাকরী জীবনের তখন সুবাতাসের সময়। সব কিছুতেই প্রাচুর্য। একমাত্র মেয়ের সখ আহাল্লাদ মিটাতে কোনই বেগ পেতে হয়নি বলা চলে।
ছেলেটার যখন জন্ম হল কলিমুল্লার বয়স তখন চল্লিশ ছাড়িয়েছে। ছেলেটা বড় হতে হতে মেয়েটা বিদেশে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষ করে ওদেশেরই একটা ছেলেকে বিয়ে করে ওখানেই সংসার পেতে বসল। বলতে গেলে ভালবাসার টান ছাড়া ওর কাছে বাবা মায়ের অন্য সব প্রয়োজনীয়তা একদম ফুরিয়ে গেল।
প্রথম সন্তান জন্মের দশ বছর পর ছেলেটার জন্ম ওদেরকে আনন্দ দিলেও মেয়েটা জন্মানোর পর যে তৃপ্তি আর চমকানোর মত যে অনুভূতি হয়েছিল, সেরকম কিছু হয়নি।
ছেলেটার জন্মের পরও জীবন একই গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু চাকরী থেকে অবসরের পর যখন তিনি টের পেলেন যে ছেলেটাকে মানুষ করে তাকে নিজের পায়ে দাড় করানোর জন্য ছেলের কাছে তার প্রয়োজন এখনো অনেক বছরের। কলিমুল্লা সরকার তখন আবার নতুন করে নড়েচড়ে বসলেন। সমবয়সী কলিগরা যখন নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে ঘরমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত, কলিমুল্লার তখন ঘর থেকে বের হয়ে নতুন করে সব শুরু করতে হল।
হিসেব করে দেখলেন, অবসরের পরও কম করে আরো পনেরো বিশ বছর তাকে শারীরিক আর আর্থিক ভাবে কর্মঠ থেকে ছেলেকে সর্বতোভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। আর তাই সারা জীবন ধরে একটা চাকরী শেষ করে তাকে নতুন আরো একটা কাজের জগৎ গড়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে হল।
দীর্ঘ চাকরী জীবনের শেষের দিকটাতে সবাই পাহাড়ের চুড়ার উপরস্থিত অল্প বিস্তর সমতলে হাটাহাটি করে নামার সময় আর কোন রকমে স্পীড না বাড়িয়ে বরং স্টিয়ারিঙের দিকে মনোযোগ দিয়ে ধীরে সুস্তে নামার কাজটা শেষ করে। এ সময়টাতে স্পীড নয় স্টিয়ারিং নিয়ে ভাবতে হয়, যেন সারা জীবনের অর্জনের ভার নিয়ে হোঁচট না খায়।
অনেকটা ভাটির টানে চলার সময় শুধু মাত্র হাল ধরে রাখার মত।
কিন্তু এ বয়সে এসে কলিমুল্লাকে নতুন জোয়ারের মুখোমুখি হয়ে উজান যাত্রার প্রস্তুতি নিতে হল।
কলিমুল্লা তার এ চ্যলেঞ্জের মুখে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলেন। বুঝলেন মানুষের শরীর মন প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে খুব পটু।
লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রেখে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে যেয়ে তার মনের আর শরীরের বয়োবৃদ্ধিটা যেন কিছুটা স্লথ হয়ে জীবন এগিয়ে চলল।
বার্ধক্য আর অবসর জীবনের সৌখিনতা থেকে জীবন তাকে বঞ্চিত করল। এমনকি এ সময়ে তার স্ত্রী বিয়গের মত ঘটনাও তাকে শারীরিক মানসিক ভাবে একটুও টলাটে পারল না।
যাহোক, ছেলেটা লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে কয়েকটা মাস বাবার সাথে থেকে একটা ভাল চাকরী নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাল। ছেলেটা যাওয়ার আগে বারবার করে বলল- বাবা, তুমি একা থাকবে কি করে?
ছেলের প্রশ্নে কলিমল্লা কেবল মৃদু হাসলেন। কোন প্রশ্নের জবাব না থাকলে মানুষ এ রকমই ভাবে হাসে বোধহয় নিজেকে উদ্দেশ্য করে।
শেষ চুড়াটা পার হওয়ার পর মেঘমুক্ত আকাশে যদি নতুন আর কোন চুড়া না দেখা যায়, আরোহি তখন নিশ্চয়তার আনন্দে নিরত হয়। এ অবস্থায় যখন আর কিছু করার থাকে না তখন আরোহীর মনে একটা অজানা ক্লান্তি একটা অবসাদ ভর করে।
জীবনের এই সন্ধিক্ষণে এসে কলিমুল্লার শরীর মন ক্লান্তিতে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে লাগল। চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাতারাতি যেন বয়সটা বেড়ে যেতে লাগল। পিছনে ফিরে দেখল তার পুরনো সব বন্ধু বান্ধব থেকে সে একদম আলাদা হয়ে গিয়েছে।
ছেলেটা যতদিন ছিল ততদিন কর্মচাঞ্চল্যে ভরা শহরে থেকে উপার্জন করা ইত্যাদির একটা তাড়না ছিল। ছেলেটা বিদেশে পড়াশোনা করার সময় গভীর রাতে টেলিফোন আসলে কলিমুল্লা সরকার একটা রিং হওয়ার সাথে সাথে টেলিফোন ধরতেন। বিদেশ বিভুয়ে লেখাপড়া নিয়ে ছেলেটা ব্যস্ত থাকে। তাই যখনি সময় বের করতে পারতো তখনি টেলিফোন করে বাবাকে।
সময়ের ব্যবধানের জন্য ছেলের যখন ভরা দুপুর বা বিকাল তখন এ দেশে কলিমুল্লার রাত দুপুর বা শেষ রাত। তাতে কলিমুল্লা সরকারের কিছু এসে যেত না, ছেলের সময়ই বাবার সময় ছিল।
ছেলের কথা ভেবে কলিমুল্লা সরকার সজাগ থেকেই রাত দিন কাটাতেন।
ছেলেটা চলে গেল। তার এ যাত্রার জন্যই এত সব তৎপরতা, এ তো জয়যাত্রা। কিন্তু ছেলেটা যাওয়ার পর থেকে কলিমুদ্দিন নিজের সে শারীরিক মানসিক সামর্থ্যকে ধরে রাখার সব অছিলা হারিয়ে ফেললেন। আর তাই শহরের ব্যস্ত জীবন ছেড়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়ে নিজ পিতৃপুরুষের ভিটেতে চলে আসলেন।
নদীর ধার ঘেঁসে প্রায় দশ একর জমির উপর তৈরি তার পর দাদার আমলের জমিদার বাড়ী। তার দাদার আমল পর্যন্ত জমিদারী ছিল।
কলিমুল্লার বাল্যকাল এ বাড়ীর আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে। তখন বাড়ির লোক আর পাড়া প্রতিবেশী সকলে তার বড় নামটা খাটো করে আদর করে কল্লু বলে ডাকতো। কিন্তু এখানে ফিরে বুঝল এখন তাকে সেই আদুরে নামে ডাকার আর কেউ জীবিত নেই। কল্লুকে সবাই ভুলে গিয়েছে।
এখানেও নিজেকে খুব বেমানান লাগলো। তাইতো নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছে কলিমুল্লা। নদীর পাড়ে বাধানো ঘাটের উপর তৈরি প্রশস্ত কাচারী ঘর। কলিমুল্লার নিঃসঙ্গ দিনগুলো সেই কাচারী ঘরের বারান্দায় বসে কাটে।
ছোট বেলায় নদীটা স্রোতস্বিনী ছিল। স্রোত ছিল বলেই নদীটা জীবন্ত ছিল। শুখনো মৌসুমে স্রোতটা তেমন বোঝা না গেলেও দৃশ্যত উপরিভাগের স্থীর পানির নিচে হাত ডুবালে নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু প্রবাহ পরিষ্কার ভাবে বোঝা যেত।
কিন্তু এতকাল পরে নদী একদম শুখিয়ে মরে যেন হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বলে মনে হল কলিমুল্লার কাছে। তা দেখে মনটা দুঃখে ভারাক্রান্ত হল।
মানুষের বয়স হয় আর বয়সের ভারে মানুষ একদিন মারা যায় সেটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু যে প্রকৃতি সব জীবনকে ধারণ করে, সব খোরাক জোগায় সে যদি মারা যায় তবে এ পৃথিবী যে অর্থহীন হয়ে যায়।
নদী প্রকৃতির অংশ, সেটা মারা যাবে এটা কলিমুল্লা সরকার কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না।
তিনি অনেক কষ্টে পায়ে পায়ে নেমে গেলেন শীর্ণ নদীর ধারে।
কচুরিপনাতে ভরে গেছে নদীটা। ভেসে থাকা কচুরিপনা একদম নড়ছে না। পানি যেন জমাট বেধে আছে। পচা একটা গন্ধ এসে নাকে লাগলো।
পাড় থেকে নিচে নেমে নিজের বাল্যকালে দেখা নদীর সেই কর্মচঞ্চলতা মনে করার চেষ্টা করলেন।
তখন নদীতে স্রোত ছিল, কত পাখী বসতো, মাছেরা খেলা করত, সন্ধার নির্জনতায় কুলকুল শব্দও শোনা যেত। কত মানুষ নামতো এর পানিতে, মাছ ধরতে বা গোশল করতে। তিনি নিজেও কতদিন এ নদীতে ডুব সাতার কেটে গোসল করেছেন।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে সব স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে হারিয়ে গেলেন কলিমুল্লা।
খুব মায়া লাগলো শীর্ণ নদীটা দেখে।
কলিমুল্লা এক দু পা করে এগিয়ে একদম পানির কাছে গেলেন। অনেকটা মৃতপ্রায় কোন মানুষের দেহে প্রাণ আছে কিনা তা নাড়ী পরীক্ষা করে দেখার মত।
নদীর একদম কাছে গেলে চোখে পড়ল দু একটা মাছ কিলবিল করছে। মরা নদীতে জীবন প্রবাহ! খুব ভাল লাগল তার। আরো কাছ থেকে দেখার জন্য তিনি বসলেন একদম নদীর ধার ঘেঁসে। সে জায়গাটাতে কাদা মাটি জমা হয়ে কিছুটা বাধার সৃষ্টি হওয়াই খুব ক্ষীণ স্রোতধারা প্রবাহিত হচ্ছে।
চলার পথে বাধা বিঘ্ন যখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তখন সেখানে প্রাণের স্ফুরন ঘটে।
স্মৃতি বিজড়িত মৃতপ্রায় নদীটির সাথে কলিমুল্লা নিজের জীবনের একটা অভিন্নতার স্বাদ পেলেন।
কলিমুল্লা তার যৌবনটা আনন্দঘন পরিবেশে কাটিয়ে যখন গতি কমিয়ে বার্ধক্যের কাছে নিজেকে সপে দিতে চায়লেন তখনই জীবন নতুন চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দিল। আর তাইতো অবসর কালের বন্ধুদের ত্যাগ করে আবার তারুন্যের দলে নাম লিখিয়ে উজানে নাও বাওয়ার প্রত্যয় নিলেন।
নিজ বয়সের বন্ধুদের ছেড়ে তরুণদের দলে নতুন করে শুরু করা সে চ্যালেঞ্জও যখন ফুরিয়ে গেল, তখন নিজের দিকে তাকালেন তিনি। তখন বুঝলেন তার নতুন বন্ধুদের সাথে তিনি সত্যিই বেমানান ছিলেন। আর পুরনো বন্ধুদের যারা এখনো বেচে আছে তারা বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে সব জানালা বন্ধ করে শুধু মৃত্যুর জন্য প্রতিক্ষা করছে, তাদের কাছেও তিনি বেমানান।
সরকারী চাকরী শেষে বৃদ্ধ জীবনটা নিরিবিলি পরিবেশে কাটানোর জন্য পিতৃভূমিতে আসার ইচ্ছে তার ছিল। সে ইচ্ছেটা পুরন ঠিকই হল, তবে অসময়ে।
এরই মধ্যে কখন আকাশ মেঘে ঢেকে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে খেয়ালই করিনি।
প্রবল বর্ষণ শুরু হল। মনে হল মৃতপ্রায় নদীটি এবার আবার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেয়ে নিজ মূর্তি ধারন করে কুল কুল করে বইতে শুরু করবে।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজলেন তিনি। মন চাইলো নদীর সাথে মিশে যেতে।
খোদাবক্সের ডাকাডাকিতে সম্বিত ফিরে পেয়ে ওর কাধে ভর দিয়ে নদী থেকে উঠে ফিরে আসলেন কাচারি ঘরে।
কলিমুল্লার থেকে বছর দশেকের ছোট খোদাবক্স। এ বাড়ীর পুরনো কর্মচারী। ওরা বংশপরস্পর এ বাড়ীতেই থাকে। ওর জন্মও এ বাড়ীতে।
-বাবু, এ অনিয়ম যে আপনার শরীরে সইবে না। কাচারীর স্নান ঘরে শুখনো কাপড় রাখা আছে চলুন আমি দিচ্ছি সেগুলো, ভেজা কাপড় বদলিয়ে নেবেন।
-থাক, আমি নিজেই পারবো।
অনেকটা ঢুলতে ঢুলতে স্নানের ঘরে ঢুকলেন কলিমুল্লা।
নির্বাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল খোদাবক্স। যদিও ছোট বয়সে তাদের একত্রে অনেক স্মৃতি আছে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সে সম্পর্কে বড় ধরণের ফাটল ধরেছে। বাবুকে সাহায্য করা দরকার কিন্তু তার উপর সে জোর খাটানোর সাহস হল না খোদাবক্সর।
কলিমুল্লা ভেজা কাপড় পাল্টে বেশ কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে ইজি চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলেন। খোদাবক্স লক্ষ্য করল বাবু ঠিক মত কাপড় পাল্টাতে পারিনি, চুলগুলোও ভেজা। কিন্তু কিছু বলার সাহস হল না।
বৃষ্টির পানি দুধার থেকে প্রবল বেগে গড়িয়ে গড়িয়ে নদীতে পড়ে নদীটাকে ভরপুর করে দিতে লাগলো।
দুপাড়ের সব পচা শুখনো ডাল পাতা ধুয়ে অবিরাম নদীতে ফেলছে আর নদীর স্রোত সেগুলো সহ তার বুকে জমে থাকা সব আবর্জনা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।
মৃতকে দাফনের জন্য যেমন ধুয়ে মুছে পাক পুত করা হয় অনেকটা সেরকম মনে হল কলিমুল্লার কাছে। মৃতপ্রায় নদী নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে একাকার হওয়ার আনন্দে যেন বিভোর হল।
নদী ধীরে ধীরে নিজেকে হারিয়ে অন্য রুপ ধারণ করতে লাগল।
নিজেকে হারিয়ে ফেলার মধ্যেই যেন যত সুখ, যত পূর্ণতা। সন্ধ্যা নাগাত ব্যাঙের ঘ্যা ঘ্যা ডাকে সারা প্রান্তর মুখরিত হয়ে উঠল।
সন্ধ্যা নামতে নামতেই চারিদিক অন্ধকারে ঢেকে রাত গভীর হয়ে গেল।
-কল্লু বাবু, অন্দর মহলে কখন যাবেন?
চমকে উঠেলন কলিমুল্লা, ছোট বেলার সে নামটা শুনে। কত যুগ পরে হারানো নিজেকে যেন খুঁজে পেলেন তিনি। কিন্তু উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে মন একদম চাইল না।
-আর অন্দর মহলে যেতে মন চাচ্ছে না, খোদাবক্স।
খুব ক্ষীণ কন্ঠে কথাটা বললেন কলিমুল্লা। তার কন্ঠে সেই ছোট বেলার খেলার সাথি খোদাবক্সের প্রতি ভালবাসা ঠিকরে পড়ল।
বাবুর কন্ঠে পরিষ্কার ক্লান্তি লক্ষ্য করে খোদাবক্স ইতস্তত করে দাঁড়িয়ে রইল।
এভাবে বৃষ্টি হলে ভোর হতে হতে নদী দুপাড় উপচে কাচারী ঘরের বারান্দায় এসে ঠেকবে। ছোট বেলায় একবার দেখেছিল নদীর সে রুপ। অনেক মানুষ আর গবাদি পশুর লাস ভাসতে দেখেছিলেন সে সময়। সে রূপটা আবার দেখতে খুব মন চায়ল কলিমুল্লার।
নদী ফুলে ফেঁপে উচু নিচু সব এক সমতায় নিয়ে আসবে। তখন খানা খন্দ ডোবা কারোরি কোন আলাদা অস্তিত্ব থাকবে না, আলাদা করে কারো হারাবার কিছু থাকবে না। মিলে মিশে সব একাকার হয়ে যাবে।
-তুই যা খোদাবক্স, ঘুমিয়ে পড়। ফিরতে একদম মন চাইছে না।
ক্ষীন কন্ঠে কথাটা বলে চোখ বন্দ করল কলিমুল্লা।
তার গলায় ঘড় ঘড়ানি শব্দে চমকে উঠল খোদাবক্স।