জীবনের অর্থ খোঁজার প্রয়াসে ছন্দ কবিতা "রাজা বাবুর কুরসি-১"।

আপডেট: ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩:২৬

রাজাবাবুর কুরসি-১

শূন্য সে জলপথ, ঘটিছে অবিরাম বারিপাত
বাবু বসে বজরায়।
যতদূর চোখ যায় চিত্ত জুড়ায়।
পাশে বসে, অমাত্য সব হেসে হেসে,
খোশগল্পে মেতে রয়।

জনশূন্য নদীতট,
ভিড়িবে বজরা, সমুখে ঘাট।

বাবু রাগিয়া কয় –
‘ঘাটে দেখি একটি কুলিও নাই!
এখন কি উপায়! অধমের দল গেল কোথায়?’

রাজাবাবু খুব বিরক্ত আজ, হাতে মেলা কাজ।
জড় হবে আম জনতা, দিতে হবে বক্তৃতা।

না হলে কত, অজ্ঞান জনতা শত
বঞ্চিত হবে, মূর্খ হয়ে রয়ে যাবে,
হতভাগার দল যত!

খোলা প্রান্তর, যত নারী ততো নর
দলে দলে সবে বসিবে ভুতলে।
বাবু বসিবেন উচ্চাসন কুরসিতে,
মোটা গদি আটা তাতে।

রাজা বাবু বেশ, ইয়া বড় অঙ্কদেশ,
প্রজা সাধারণ, অর্ধ ভুখা নিরাবরণ
অচ্ছুতের সাথে, রাজা কি করে বসেন মাটিতে?

তা কখনো হয়?
পাছে, না যেন হয় নয় ছয়
কুশলী নায়েব সে মতে, কুরসি নিয়েছে সাথে।

বজরা হতে, তা নামাতে তটে
রেখেছিল বলি, গোটা দুই কুলি, থাকতে ঘাটে।

ঘাটে কুলি না দেখে, বাবু গেলেন ক্ষেপে।
‘কি ঔদ্ধত্য বেটার, কটা মাথা ঘাড়ে তার!’
রেগে মেগে বিরক্তি ভরা মুখে
বাবু খোঁজেন তাকে, দ্বিনেত্র লাগিয়ে চোখে।

অদূরে গাছ তলে, শুয়ে অশ্বত্থ মুলে
পুরো দেহ জুড়ে, কলাপাতা মুড়ে
বাচিয়ে নিজেকে কোনমতে, অনিবার বর্ষণ হতে
ঘুমের কোলে পড়েছে ঢলি, কৃশাঙ্গ এক কুলি।

ঘুমাচ্ছে ব্যাটা নচ্ছার ঘটিরাম!
পড়িছে বর্ষণ অবিরাম।
ব্যাটা মানুষ না গন্ডার,
এতটুকু বোধও কি নেই তার?

রেগে মেগে, বাবু করে গরগর,
পেয়াদা ডাকে করে চিৎকার।

কাঁচা ঘুম কেটে, কুলি আসে ছুটে।
বেচারা কুলি!
ইয়া বড় কুরছি দেখে নিল ঢোক গিলি।

কৃশাঙ্গ অস্থির জাল, যেন সাক্ষাৎ কঙ্কাল
অরদ অধরে যেন আঁকা, বেকুবের হাসি মাখা
দাঁড়িয়ে যেন এক যন্ত্র বিকল।

জড়সড় হয়ে সাহস যুগিয়ে কহিল বটে-
-এতবড় কুরসিখানা, নামানো যাবে না,
আমাকে ফেললেও কেটে!

নায়েব বলে রেগে –ব্যাটা তোর সাহস বটে,
কুরসি না নামালে বাবু নামবে না ঘাটে!
আরে গণ্ডমূর্খ ঘটকর্পর!
কিছু কি নেই ঘটে তোর?

নামবে কি করে রাজা মহাশয়,
যদি কুরসি না নামায়?
মূর্খ প্রজা! রাজাসন ছাড়া রাজা!
তা কখনো হয়!